ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২

নারী সমন্বয়কদের লক্ষ্য করে গুজবের ঝড়

২০২৫ অক্টোবর ০৯ ১৪:৪২:৪২

নারী সমন্বয়কদের লক্ষ্য করে গুজবের ঝড়

নিজস্ব প্রতিবেদক :গত বছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নারীদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল এক প্রধান বৈশিষ্ট্য। তারা কেবল রাজপথে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেননি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালানোসহ আন্দোলনের সব ধাপেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে আন্দোলনের এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও এই নারী সমন্বয়ক ও অ্যাক্টিভিস্টদের নিয়ে ব্যাপক অপতথ্য ও অপপ্রচারের ঝড় উঠেছে, যার বেশিরভাগই হয়রানিমূলক ও মানহানিকর।

তথ্য যাচাইকারী সংস্থা রিউমার স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত আটজন নারী আন্দোলনকারীর বিরুদ্ধে ৩২টি অপতথ্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই অপপ্রচারের প্রধান লক্ষ্য ছিলেন ফারজানা সিঁথি, যিনি জুলাই আন্দোলনের অন্যতম মুখ। তার নামে ছড়ানো অন্তত ১৫টি ভিডিও ভুয়া, যার বেশিরভাগই এআই ও ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা, যিনি সাতটি অপতথ্য প্রচারের শিকার হয়েছেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফসিন মেহনাজের বিরুদ্ধেও পাঁচটি অপপ্রচার শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে তিনটিতে তার আপত্তিকর ভিডিও দেখানো হয়েছে বলে মিথ্যা দাবি করা হয়েছে।

এ ছাড়া সামিয়া মাসুদ মম, তিলোত্তমা ইতি, সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি, এথিনা তাবাসসুম মীম এবং আনিকা তাসনিমের বিরুদ্ধেও একাধিক অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে, ভুয়া নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন নারীর ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে কমপক্ষে ১৬টি অপপ্রচার চালানো হয়েছে, যার মধ্যে কিছু কনটেন্ট ভারতের ও অন্যান্য দেশের হলেও তা ভুলভাবে জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে জড়ানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নারীদের ঘিরে সংঘবদ্ধভাবে গুজব ছড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। উদাহরণ হিসেবে এপ্রিলে ‘রুবাইয়া ইয়াসমিন’ নামে একটি পরিচয়ে পাঁচটি ভাইরাল কনটেন্ট ছড়ানো হয়েছিল, যার একটি আপত্তিকর ভিডিও। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই নারীর প্রকৃত নাম যুথী এবং তার কোনো রাজনৈতিক সংযোগ নেই।

এ প্রসঙ্গে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নারী কর্মীরা এই অপপ্রচারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন, কারণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অনেক সময় এসব ভুয়া তথ্যকে সত্য মনে করে। এতে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নারীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তিনি জানান, এটি মূলত নারীদের রাজনীতি ও আন্দোলন থেকে দূরে রাখার একটি কৌশলগত প্রচেষ্টা।

রিউমার স্ক্যানারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশের অনলাইন পরিসরে নারী কর্মীদের বিরুদ্ধে অপতথ্য এখন একটি সংগঠিত অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। এটি শুধু ব্যক্তিগতভাবে নারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং সমাজের অংশগ্রহণমূলক রাজনীতিকেও দুর্বল করে দিচ্ছে।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত