ঢাকা, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২

ইসলামী ব্যাংকে অবৈধ নিয়োগে ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

২০২৫ অক্টোবর ০৪ ১৮:৪৫:৩১

ইসলামী ব্যাংকে অবৈধ নিয়োগে ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে এস আলম গ্রুপের প্রভাব বিস্তারের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান, নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা মারাত্মক সংকটে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনায় এস আলম গ্রুপের হস্তক্ষেপের ফলে হাজারো অনিয়ম, অদক্ষ নিয়োগ এবং আর্থিক লুটপাটের মাধ্যমে ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকায়। এসব অনিয়মের কারণে ব্যাংকের অভ্যন্তরে যেমন অস্থিরতা বেড়েছে, তেমনি গ্রাহকদের আস্থার জায়গাতেও সৃষ্টি হয়েছে চরম ভাঙন।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরেকোনো পরীক্ষা বা বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই অনিয়ম করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ৩৪০ জনকে, যাদের মধ্যেঅনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র ভুয়াবলে চিহ্নিত হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু ভুয়া সনদধারী চাকরিচ্যুত হয়েছেন, বাকিদের বিরুদ্ধেও তদন্ত ও ব্যবস্থা চলছে।

ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,অবৈধ নিয়োগ ও দুর্নীতির কারণে গত সাত বছরে ব্যাংকটির ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কর্মকর্তারা জানান, এসব অনিয়মের বেশির ভাগই ঘটেছেচট্টগ্রামের পটিয়া এলাকার একটি গোষ্ঠীর মাধ্যমে, যাদের অনেকেই যোগ্যতা ছাড়াইমোটা অঙ্কের বিনিময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িতদের মাধ্যমেকয়েক শ’ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছেবলেও দাবি করা হয়েছে।

সম্প্রতি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য একটিবিশেষ পরীক্ষা নেওয়া হলে চাকরিচ্যুত ও সাবেক কর্মকর্তারা তা বয়কট করেন। এদের সমর্থনেকিছু তরুণ-তরুণী আন্দোলনে জড়ান এবং সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার চালান। শুক্রবার ভোরে ইসলামী ব্যাংকেরঅফিশিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাককরেপ্রোফাইল ও কাভার ছবি পাল্টে হুমকিপূর্ণ বার্তা প্রকাশকরা হয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,বিদ্রোহী ও অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের দিক থেকেই এসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে

ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিক থেকেও উদ্বেগ বাড়ছে। সূত্রগুলো জানায়,ভল্ট ও ক্যাশ কাউন্টারএখনসাবেক বিদ্রোহী কর্মীদের হুমকির মুখেরয়েছে। তারাসন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়াতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশকরা হয়েছে। ব্যাংকেরভাড়া করা নিরাপত্তা ব্যবস্থাও প্রশ্নের মুখেপড়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, এস আলম গ্রুপের দ্বারানামে-বেনামে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, যা ব্যাংকটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ মাত্রার আর্থিক লুটপাট। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ব্যাংকটিবিচার ও পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করেছে

এদিকে,নতুনভাবে নিয়োগ পাওয়া কিছু কর্মকর্তাগ্রাহকদের সঙ্গেঅশালীন আচরণ, আঞ্চলিক ভাষায় কথাবার্তা এবং দায়িত্বহীন মনোভাবদেখিয়েব্যাংক সেবার মান ক্ষতিগ্রস্ত করছেনএমন অভিযোগও উঠেছে। এক চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা বলেন, “আমি কুড়িগ্রামের একটি শাখায় কর্মরত ছিলাম, কোনো কারণ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এখনো যারা কাজ করছেন, তাদের দায় আমাদের ঘাড়ে চাপানো উচিত নয়।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, এস আলম শুধু একটি ব্যাংক নয়,সম্পূর্ণ ব্যাংকিং সিস্টেমকে দুর্বল করে দিয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলেব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণজরুরি।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)-এর চেয়ারম্যান এবংসিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনসম্প্রতি এক আলোচনায় বলেন,“এস আলম একাই পুরো ব্যাংক খাতের জন্য সমস্যা তৈরি করেছে।”তিনি ব্যাংকটির টিকে থাকার জন্যউন্নত ব্যবস্থাপনা ও ব্যয় হ্রাসের ওপর জোর দেন

ইসলামী ব্যাংকেরপাবলিক রিলেশন ও ব্র্যান্ডিং বিভাগের প্রধান নজরুল ইসলামবলেন, “বিদ্রোহী কর্মীদের মনোভাব এবং অনির্দিষ্ট কার্যক্রম ব্যাংকের ভল্ট ও ক্যাশ নিরাপত্তায় হুমকি তৈরি করছে। বিষয়টি অবহেলা করলে ঝুঁকি আরও বাড়বে।”

এদিকে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে। একজন গ্রাহক,আমিনুল ইসলামসামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “পটিয়ার অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া লোকজন চাকরি বাঁচাতে আন্দোলন করছে, কিন্তু কোটি কোটি টাকা লুট করে নেওয়া এস আলমের বিরুদ্ধে কেউ কেন মুখ খুলছে না?”

ফেসবুক পেজ হ্যাক এবং ব্যাংকের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘটনায় তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত