ঢাকা, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২

ভারত বনাম বাংলাদেশ: পাহাড়ি অঞ্চলে সেনা নিয়ে দ্বিমুখী কূটনীতি

২০২৫ অক্টোবর ০৩ ২৩:৫০:৪৪

ভারত বনাম বাংলাদেশ: পাহাড়ি অঞ্চলে সেনা নিয়ে দ্বিমুখী কূটনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে সেনার উপস্থিতি ব্যাপক। কাশ্মীর, লাদাখ, নাগাল্যান্ড, আসাম ও মণিপুরের প্রতিটি এলাকায় সেনা ক্যাম্প, বাঙ্কার এবং চেকপোস্ট চোখে পড়ে। কাশ্মীরেই সাত লাখ সেনা অবস্থান করছে। ভারতের পাশাপাশি চীন, পাকিস্তান ও নেপালে সীমান্ত ও পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপক সামরিক বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

তবে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা মোতায়েন নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলা হয়। স্থানীয় কিছু পাহাড়ি নেতা সেনা হটাও স্লোগান দিয়ে থাকে, এবং এতে যুক্ত হয় দেশের কিছু তথাকথিত বামপন্থি ও সুশীল সমাজের অংশ।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত নিজের পাহাড়ে সেনা দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন করতে দ্বিধা করে না। কাশ্মীরে প্রতিদিন গড়ে সাত-আটজন নিহত হয় সেনা অভিযানে। নাগাল্যান্ডে অন্তত ৬০ বছর ধরে সেনা মোতায়েন রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশে চীনের হুমকি দেখিয়ে ভারত প্রতিটি পাহাড়ি এলাকায় সেনাঘাঁটি তৈরি করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীদুজ্জামান বলেন, ভারতের আচরণ দ্বিমুখী। নিজেদের পাহাড়ে সেনা দিয়ে দমননীতি চালায়, অথচ বাংলাদেশের পাহাড়ে সেনা মোতায়েন নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে চায়। এটি কেবল রাজনৈতিক নয়, কূটনৈতিক চক্রান্তও।

১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে সেনাক্যাম্পের সংখ্যা ৪৫০-এর কাছাকাছি থেকে কমে ২৩২-এ দাঁড়ায়। এরপর ইউপিডিএফসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন ও ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পায়। নিরাপত্তা বাহিনী বলছে, এর পেছনে ভারতের প্রত্যক্ষ মদত আছে। ইউপিডিএফের অন্তত ছয়টি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ভারতের মিজোরামে রয়েছে, যেখান থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা বাংলাদেশের ভেতরে হামলা চালায়।

খাগড়াছড়ির এক লে. কর্নেল এবং ব্রিগেড কমান্ডারের তথ্য অনুযায়ী, ইউপিডিএফ সীমান্তবর্তী এলাকায় অনুপ্রবেশ চালায়। পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা উপস্থিতি অপরিহার্য। তাদের মতে, নতুন ২৫০ ক্যাম্প স্থাপন জরুরি।

স্থানীয়রা জানান, সেনা থাকলেই তারা নিরাপদে জীবনযাপন ও ব্যবসা করতে পারেন। বান্দরবানের কলেজছাত্রী অথনু চাকমা বলেন, সেনা না থাকলে রাতে বের হওয়া যায় না। পাহাড়ে অন্ধকার নামলেই সন্ত্রাসীরা চাঁদা তোলে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন, পার্বত্য অঞ্চলের অসন্তোষের পেছনে প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে।

বিশ্বের অন্যান্য পাহাড়ি অঞ্চলেও সেনা মোতায়েন সাধারণ। ভারতের উত্তর-পূর্ব ও হিমালয়, চীনের তিব্বত ও শিনজিয়াং, পাকিস্তানের গিলগিত-বালতিস্তান এবং নেপালের হিমালয় অঞ্চলে নিয়মিত সেনা ও সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মূল উদ্দেশ্য সীমান্ত রক্ষা, বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন, অবৈধ অস্ত্র-চালান রোধ এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা।

ইউপিডিএফের নীলনকশা: ধর্ষণ নাটক

খাগড়াছড়িতে কিশোরী ধর্ষণের ঘটনার পেছনে একটি পরিকল্পিত ধর্ষণ নাটক থাকার প্রমাণ মিলেছে। মেডিকেল রিপোর্টে কোনো ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ইউপিডিএফ এই ঘটনা ব্যবহার করে পাহাড়ে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করেছে।

রোববার রাঙামাটির গুইমারা এলাকায় ইউপিডিএফ সদস্যদের গোলাগুলি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

ড. শাহীদুজ্জামান বলেন, ভারতের কৌশল হলো বাংলাদেশের পাহাড়কে অস্থিতিশীল রাখা, যাতে কৌশলগত বন্দর ও ট্রানজিট রুটে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। সেনা না থাকলে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত