ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ

২০২৫ অক্টোবর ০১ ০০:১৫:০১

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের মূল উৎস মিয়ানমারে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে তিনি এই সুপারিশ তুলে ধরেন। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং তাদের দ্রুত রাখাইনে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন যে, এই সংকটকে মিয়ানমারের বিস্তৃত সংস্কার প্রক্রিয়ার কাছে আটকে রাখা যাবে না। তহবিল ঘাটতি সমাধানের একমাত্র শান্তিপূর্ণ বিকল্প হলো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা, যা আন্তর্জাতিক সংরক্ষণের চেয়ে কম খরচে সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য ৭ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছেন:

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ তৈরি: একটি কার্যকর ও টেকসই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন।

মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রত্যাবাসন শুরু করা: মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অপরিহার্য।

রাখাইন স্থিতিশীলকরণে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও পর্যবেক্ষণ উপস্থিতি: রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও পর্যবেক্ষণ থাকা জরুরি।

রাখাইন সমাজে রোহিঙ্গাদের টেকসই সংহতকরণের জন্য আস্থা বৃদ্ধি কার্যক্রম: প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের রাখাইন সমাজে শান্তিপূর্ণভাবে পুনর্বাসনের জন্য আস্থা তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে।

যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার জন্য দাতা তহবিল সম্পূর্ণ করা: রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল নিশ্চিত করা।

দায়মুক্তি ও পুনঃস্থাপন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা ও নরকো-অর্থনীতি ভেঙে দেওয়া: রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়মুক্তি বন্ধ করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং মাদক অর্থনীতির অবসান করা।

সীমান্ত-পারাপার অপরাধ প্রতিরোধ: সীমান্তে যেকোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা।

ড. ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গারা সর্বদা নিজ বাড়ি ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং সম্প্রতি সংঘাত এড়াতে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাবাসনের সুযোগ দেওয়া উচিত। তিনি রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের ওপর ক্রমবর্ধমান সামাজিক, আর্থিক ও পরিবেশগত চাপের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক চ্যালেঞ্জ, যেমন বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে কর্মসংস্থান দেওয়া সম্ভব নয়।

প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যের সমাপনীতে বলেন, “বিশ্ব আর রোহিঙ্গাদের বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে পারে না। আজ আমরা সবাই একত্রিত হয়ে এ সংকটের চূড়ান্ত সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিই। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতার অঙ্গীকার জানানো হলো।”

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত