ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ আশ্বিন ১৪৩২
শেয়ারবাজারে পোশাক খাতের চাপ: ৭২% কোম্পানি লোকসানে

আবু তাহের নয়ন
সিনিয়র রিপোর্টার

আবু তাহের নয়ন: দেশের অর্থনীতির প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক (আরএমজি) এবং টেক্সটাইল এখন শেয়ারবাজারেও বড় ধাক্কা খাচ্ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৫৮টি বস্ত্র ও পোশাক কোম্পানির মধ্যে ২৫টি বর্তমানে ‘জাঙ্ক স্টক’এবং আরও ১৭টি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে। অর্থাৎ, খাতটির তালিকাভুক্ত কোম্পানির ৭২ শতাংশেরও বেশি নিয়মিত মুনাফা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এ বিষয়টি নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করছে।
খেলাপি ঋণে শীর্ষে গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ফিনান্সিয়াল স্টেবিলিটি রিপোর্ট বলছে, ২০২৪ সালে পোশাক খাতে অনাদায়ী ঋণের (এনপিএল) হার দাঁড়িয়েছে ২৬ শতাংশ এবং টেক্সটাইল খাতে ২৫ শতাংশে। শুধু শেয়ারবাজারে মুনাফা নয়, ঋণখেলাপিতেও এ দুটি খাত শীর্ষে উঠে এসেছে। তুলনামূলকভাবে ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষি এবং আবাসন খাতে খেলাপির হার যথাক্রমে মাত্র ৬ শতাংশ, ১১ শতাংশ ও ১২ শতাংশ।
অন্যদিকে, চামড়া শিল্প ও জাহাজ নির্মাণ খাতেও খেলাপির হার সর্বোচ্চ ৩৯ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের শীর্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী ও রপ্তানিনির্ভর শিল্পগুলোর বড় একটি অংশ এখন চাপের মুখে।
ছোট প্রতিষ্ঠানের দিশেহারা অবস্থা
ব্যবসায়ী নেতা ও ব্যাংকারদের মতে, বড় কোম্পানিগুলো তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। জ্বালানি সংকট, বৈশ্বিক মন্দা এবং উচ্চ পরিচালন ব্যয়ের কারণে তাদের মুনাফা ক্রমশ কমে আসছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিড-১৯–এর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই বৈশ্বিক বাজারে চাহিদা হ্রাস এবং বিদ্যুৎ–গ্যাস সংকট ছোট কারখানাগুলোকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় তাদের টিকে থাকা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর আস্থা কমছে
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, বস্ত্র ও পোশাক খাতের অনেক কোম্পানি টানা কয়েক বছর ধরে ডিভিডেন্ড দিতে পারছে না। ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ৭২ শতাংশই যখন নিয়মিত মুনাফা করতে ব্যর্থ হয় অথবা কাংখিত ডিভিডেন্ড দিতে পারে না, তখন বাজারে ওই খাতের শেয়ার কেনাবেচার প্রবণতাও কমে যায়। এর ফলে পুরো বাজারের গতিশীলতা প্রভাবিত হয়।
এখনও সম্ভাবনার জায়গা আছে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংকট সত্ত্বেও গার্মেন্টস খাতের দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা এখনও শক্তিশালী। তৈরি পোশাক খাত এককভাবে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ যোগান দিচ্ছে এবং প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান তৈরি করছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশেরও বেশি নারী শ্রমিক। বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য খাতটিকে পুনর্গঠন ও নীতিগত সহায়তা দেওয়া গেলে পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
সমাধানের পথ: নীতি সহায়তা ও পুনর্গঠন
পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ সতর্ক করে বলেন, প্রধান রপ্তানি খাত যদি দুর্বল হয়, তবে তা শুধু শেয়ারবাজার নয়, সরাসরি কর্মসংস্থান ও রপ্তানি আয়কেও হুমকির মুখে ফেলবে। তার মতে, অসুস্থ কোম্পানির জন্য ‘নিষ্ক্রমণ নীতি’ গ্রহণ করতে হবে এবং কিছু প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠন করে আবারও প্রতিযোগিতার জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “শেয়ারবাজারে যে কোম্পানিগুলো টেকসই মুনাফা করছে, তাদের মতো সফল প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এজন্য খাতভিত্তিক নীতি, সহজ শর্তে ঋণ এবং শক্তিশালী জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি।”
সর্বোপরি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাত এখন চাপে থাকলেও এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভরসা। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত উদ্যোগই পারে এ খাতকে আবারও শেয়ারবাজারে শক্ত অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে।
এএসএম/
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- এশিয়া কাপ: পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কা, সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- উৎপাদন বন্ধ ৩০ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করেছে ডিএসই
- তালিকাচ্যুত হচ্ছে পাঁচ ব্যাংক, বলির পাঠা শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা!
- শেয়ারবাজারের ১২ কোম্পানির ২ হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ
- সিটি ব্যাংক পোর্টফোলিও ম্যানেজারের শেয়ার জালিয়াতি, তদন্তে বিএসইসি
- শেয়ারবাজারে হঠাৎ দরপতন, নেপথ্যে এনবিআরের চিঠি
- যেভাবে পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে
- এনবিআর-এর ক্যাশ গেইন প্রতিক্রিয়া অতিরঞ্জিত: আনিসুজ্জামান চৌধুরী
- বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে শেয়ারবাজারের ৬ কোম্পানিতে
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- ২৪ সেপ্টেম্বর ডুয়া’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, থাকবে নানা আয়োজন
- বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে টিভি স্ক্রলে বিশেষ বার্তা
- ডিভিডেন্ড ঘোষণার তারিখ জানাল তিন কোম্পানি
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর নতুন আবেদন
- থেমে গেল বড় বিনিয়োগকারীদের মুনাফার তথ্য তদারকি