বিসিবি নির্বাচন: কাউন্সিলর তালিকা প্রকাশে বিতর্ক

স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন ঘিরে শুরু থেকেই নানা অনিয়ম ও অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত কাউন্সিলর তালিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে ৬টি জেলা থেকে কোনো কাউন্সিলর নেই এবং ঢাকার ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, বিসিবি, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) এবং প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল যে, কোনোভাবেই যেন জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোর অ্যাডহক কমিটির বাইরে কাউকে কাউন্সিলরশিপ দেওয়া না হয়। তবে বিসিবির গঠনতন্ত্রের ৯.১ ধারায় অ্যাডহক কমিটির কোনো অস্তিত্ব নেই। এর প্রতিবাদে তামিম ইকবালের নেতৃত্বে 'বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় এবং ক্লাবের সকল পর্যায়ের ক্রিকেট খেলোয়াড় ও সংগঠকবৃন্দ'র ব্যানারে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ তামিম ইকবাল, ইশরাক হোসেন, রফিকুল ইসলাম বাবুসহ অন্যান্য সংগঠকরা আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন যে, কাউন্সিলরশিপ প্রদানে অনিয়ম অব্যাহত থাকলে তারা আইনের আশ্রয় নেবেন এবং প্রয়োজনে বিসিবি ঘেরাও করবেন।

তবে বাস্তবে দেখা গেছে, আল্টিমেটামের কোনো প্রভাব পড়েনি। নবগঠিত জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার মধ্য থেকেই ৬৪টি জেলা ও ৭টি বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলরশিপ প্রদান করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, গত ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যে সব জেলা ও বিভাগ থেকে কাউন্সিলরশিপ প্রদান করা হয়েছিল, তা বাতিল হয়ে গেছে। ১৭ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরশিপ পাওয়ার পর ১৮ সেপ্টেম্বর বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়ে অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলরশিপ প্রদানের আবেদন করেন। সেই চিঠি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সকল জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসকদের হাতে পৌঁছায়, যার প্রেক্ষিতে তারা কাউন্সিলরশিপ পরিবর্তন করে নিজ নিজ জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্যদের মধ্য থেকেই কাউন্সিলরশিপ প্রদান করেছেন।

তবে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, নরসিংদী, সিলেট, নওগাঁ, বগুড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ— এই ৬টি জেলার কাউন্সিলরশিপ এখনো খালি রয়েছে। এই জেলাগুলোর ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির বাইরে বিএনপি পন্থী প্রভাবশালী ক্রিকেট সংগঠকদের তীব্র বিরোধিতার মুখে জেলা প্রশাসকরা অ্যাডহক কমিটির সদস্যদের কারো নাম কাউন্সিলর হিসেবে বিসিবিতে জমা দেননি বা দিতে পারেননি। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি, তবে তাদের দাবি, ওই জেলাগুলোর ডিসিরা কাউন্সিলরদের নাম জমা দেননি।

পাশাপাশি, ঢাকার ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ নিয়েও 'শুভঙ্করের ফাঁকি' দেখা গেছে। ভোটার তালিকায় ২ নম্বর ক্যাটাগরি অর্থাৎ ঢাকার প্রিমিয়ার, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ লিগের ক্লাবগুলোর মধ্যে থেকে ৭৬ জন কাউন্সিলর থাকার কথা থাকলেও, সেখানে নাম আছে কেবল ৬১ জনের। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে দুদকের তদন্তাধীন ১৮টি ক্লাবের মধ্যে ১৫টি ক্লাবের নাম কাউন্সিলর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হলেও, বিসিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, 'দুর্নীতি দমন কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযোগের বিষয়ে প্রকাশ্য তদন্তের সুপারিশ করিয়াছেম তাই ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে ও জাতীয় স্বার্থে উক্ত নির্বাচন কমিশন ১৫টি ক্লাবকে বাইরে রেখে ৬১ ক্লাব নিয়ে ক্যাটেগরি-২ এর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।’

গতকাল ২২ সেপ্টেম্বর বোর্ডে জমা পড়ার পর আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ বিসিবি কাউন্সিলর তালিকা ঘোষণা করেছে।

এসপি