ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২

বাংলাদেশের মাথাপিছু জলবায়ু ঋণ ৭৯.৬ ডলার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২০ ২১:৪৯:১৩

বাংলাদেশের মাথাপিছু জলবায়ু ঋণ ৭৯.৬ ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের মাত্র ০.৫ শতাংশের জন্য দায়ী হলেও, বর্তমানে দেশের মাথাপিছু জলবায়ু ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৯.৬ মার্কিন ডলার। এই পরিমাণ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (LDC) মধ্যে সর্বোচ্চ। জলবায়ু বিষয়ক গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ-এর প্রকাশিত ‘ক্লাইমেট ডেট রিস্ক ইনডেক্স (সিডিআরআই-২০২৫)’ গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের ১৩ কোটিরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১,৩৬০ কোটি মার্কিন ডলার। এত বিশাল ক্ষতির পরেও জলবায়ু অভিযোজন খাতে আন্তর্জাতিক সহায়তা নগণ্য। অন্যদিকে, দেশের পরিবারগুলো জলবায়ু ঘটিত বিপর্যয় থেকে নিজেদের সুরক্ষার জন্য স্ব-অর্থায়নে প্রতি বছর মাথাপিছু গড়ে ১০,৭০০ টাকা (প্রায় ৮৮ মার্কিন ডলার) ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে, যা জাতীয় পর্যায়ে বার্ষিক ১৭০ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, বৈশ্বিক ফোরামে বাস্তব ফল কম আসায় মানুষ ঝুঁকিতে থাকে। অসম কার্বন নিঃসরণ প্রশ্নে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) রায়ে সাড়া দিতে হবে এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. এ. কে. ইনামুল হক বলেন, জলবায়ু বিজ্ঞান অনুযায়ী বাংলাদেশ গভীর ঝুঁকিতে। অনুদান সীমিত এবং ঋণের ঝুঁকি বেশি হওয়ায় বেসরকারি খাতের ওপর অতিনির্ভরতা আর্থিক চাপ বাড়াচ্ছে। টেকসই শক্তি গড়তে স্থানীয় জ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য।

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম. জাকির হোসেন খান সতর্ক করে বলেন, দৃঢ় অঙ্গীকার ও স্পষ্ট শাসনব্যবস্থা না থাকলে কপ-২৯-এ ঘোষিত ১ বিলিয়ন ডলারের ‘ক্লাইমেট ফাইন্যান্স অ্যাকশন ফান্ড’ কেবল উচ্চাশাই থেকে যাবে।

ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি নায়োকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রম জলবায়ু অর্থায়নকে জবাবদিহিমূলক, ন্যায্য ও ফলদায়ক করার আহ্বান জানান এবং অনুদানের বাইরে নতুন উৎস খোঁজার কথা বলেন।

পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ মনে করেন, অ্যাডাপ্টেশন ফাইন্যান্স অনুদানভিত্তিক ও ন্যায়ের ভিত্তিতে না হলে বিশ্ব জলবায়ু ঋণ–সংকটে পড়বে।

সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের কোঅপারেশন অফিসার শিরিন লিরা বলেন, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত না হলে এবং অর্থ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের কাছে না পৌঁছালে বৈশ্বিক অর্থায়ন পাওয়া কঠিন হবে।

গ্রিনপিস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফারিয়া হোসাইন ইকরা এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের জন্য ন্যায়সঙ্গত জলবায়ু অর্থায়ন পাওয়া আরও কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন এবং আইসিজের মতামতকে আইনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী ড. সাইমন পারভেজ জলবায়ু অর্থায়নকে ঋণ-নির্ভরতা থেকে সরিয়ে ন্যায় ও সমতার দিকে নেওয়ার আহ্বান জানান এবং প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান, নবায়নযোগ্য শক্তি ও জলবায়ু-স্মার্ট কৃষির ওপর জোর দেন।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্মসচিব ড. কাজী শাহজাহান বলেন, কার্যকর অর্থায়নের জন্য জাতীয়-আন্তর্জাতিক নীতিমালা বুঝতে হবে এবং স্থানীয় সক্ষমতা গড়তে হবে।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত