ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১ আশ্বিন ১৪৩২

ব্রাজিলে বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতি বৈঠক

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৬ ২২:২৩:৪৯

ব্রাজিলে বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতি বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক: আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন শক্তিশালীকরণে বিচার প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অন্তর্ভুক্তিকরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মত দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এবং ব্রাজিলের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অ্যান্টোনিও হারম্যান বেঞ্জামিন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়াতে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এই বিষয়টি উঠে আসে।

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ ব্রাজিলের জাতীয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এন্টেনিও হারম্যান বেঞ্জামিনের আমন্ত্রণে বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, পরিবেশ সংক্রান্ত বিচার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বিচার প্রশাসনে প্রযুক্তির উদ্ভাবনবিষয়ক এক প্রোগ্রামে অংশ নিতে ১০ সেপ্টেম্বর ব্রাজিল সফরে যান।

বৈঠকে উভয় দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিশেষত, উভয় দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বিচার প্রক্রিয়া সংক্রান্ত প্রযুক্তি বিনিময়, বিচারব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ এবং স্ব স্ব দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা জোরদারকরণের বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। বিচারপতিরা একমত পোষণ করেন যে, একবিংশ শতাব্দীতে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন জাতির মধ্যে বিচার বিভাগীয় আন্তঃসম্পর্ক অতীতের চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিল ও বাংলাদেশের মধ্যে কার্যকর বিচার বিভাগীয় সহযোগিতা ন্যায়বিচারকে সর্বজনীন অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।

আলোচনায় উভয় দেশের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি বিনিময়ের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বিচারপতিরা বলেন, আধুনিক বিশ্বে বিচারব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গভীর প্রভাব রাখছে। এক্ষেত্রে ব্রাজিলের সঙ্গে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, উদ্ভাবন ও ডিজিটাল অবকাঠামো ভাগাভাগির মাধ্যমে বাংলাদেশের আদালত ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আনয়ন সম্ভব। ব্রাজিলের বিচার বিভাগ বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবে বলে অ্যান্টোনিও হারম্যান বেঞ্জামিন প্রধান বিচারপতিকে আশ্বস্ত করেন।

বাংলাদেশের বিচার বিভাগে ই-ফাইলিং, ডিজিটাল কেস ম্যানেজমেন্ট, ভিডিও কনফারেন্সিং এবং অনলাইন বিরোধ নিষ্পত্তির মতো প্রযুক্তিনির্ভর বিষয়সমূহ প্রবর্তনে ব্রাজিলের অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। দুই বিচারপতি তাদের আলোচনায় উল্লেখ করেন যে, এআইয়ের সফল প্রয়োগের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থাকে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ এবং ন্যায়সঙ্গত করা সম্ভব। তারা নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে এআই-চালিত কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুকরণের মাধ্যমে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিসহ এআইয়ের সহায়তায় আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য দ্রুত, নির্ভুল ও প্রাসঙ্গিক নজির অনুসন্ধান টুলস, আইন ও রায় বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা আলোচনা করেন।

তারা বিচার প্রক্রিয়ায় দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এআইয়ের ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থাকে আরও ন্যায়সঙ্গত, দক্ষ এবং সবার জন্য সহজলভ্য করতে আইনের শাসন শক্তিশালীকরণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্তর্ভুক্তিকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায়, ব্রাজিলের বিচারব্যবস্থায় নাগরিকের অধিকার সুরক্ষায় বিচারপ্রক্রিয়া সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তিকরণে যে ধরনের বিচারিক ন্যায়পালরা রয়েছেন, সেই আদলে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় গণকেন্দ্রিক কোনো ‘অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা’ চালু করা যায় কি না, সে বিষয়েও দুই বিচারপতি আলোচনা করেন।

এসপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত

জাতীয় এর অন্যান্য সংবাদ