ঢাকা, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২

আইন হলো কোনো জাতির নৈতিক ইতিহাস: প্রধান বিচারপতি

২০২৫ নভেম্বর ০৮ ১৮:২৬:১৬

আইন হলো কোনো জাতির নৈতিক ইতিহাস: প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, সংস্কারের মূল লক্ষ্য প্রশাসনিক নয়, বরং নৈতিক—যাতে প্রতিষ্ঠান ক্ষমতাকে নয়, মানুষকে সেবা দেয়, কর্তৃত্ব বৈধতার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং বিচার বিভাগ জনগণের আস্থার নৈতিক অভিভাবকে পরিণত হয়।

শনিবার (৮ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৭৫ বছরপূর্তি (হীরক জয়ন্তী) ও পুনর্মিলনী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন।

প্রধান বিচারপতি তার মা ড. সুফিয়া আহমেদ-এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি ছিলেন সেই বিরল প্রজন্মের একজন, যাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নৈতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিল। তার জীবন নারীর একাডেমিক ক্ষমতায়ন ও শিক্ষার নৈতিক শুদ্ধতার প্রতীক, যা এখনও আমাকে প্রভাবিত করে।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৭৫ বছরের যাত্রা কেবল একাডেমিক সাফল্যের ইতিহাস নয়, বরং এটি জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। ইতিহাসের গভীর বোধ ছাড়া কোনো সংস্কারক প্রজ্ঞাবান হতে পারেন না, আর কোনো বিচারক সভ্যতার শিকড় না বুঝে আইনের যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারেন না।

আইন ও ইতিহাসের সম্পর্ক তুলে ধরে তিনি বলেন, আইন হলো কোনো জাতির নৈতিক ইতিহাস, যা ন্যায়ের ভাষায় লেখা হয়। আর ইতিহাস হলো কেন সমাজকে আরও ভালো হতে হবে, তার অনুসন্ধান।

প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি মিসরের বিবলিওথেকা আলেকজান্দ্রিনা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, প্রাচীন আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার মানবজাতির সেই সাহসী বিশ্বাসের প্রতীক, যেখানে জ্ঞানের মাধ্যমে ভিন্ন সভ্যতার মানুষ একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হতো। তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও রাজনৈতিক প্রতিকূলতা ও ইতিহাসের বিভাজন অতিক্রম করে জ্ঞানের আলোয় জাতিকে আলোকিত করে চলেছে।

বিচার বিভাগীয় সংস্কারের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “বিচার বিভাগ কেবল ঐতিহ্যের স্বস্তিতে টিকে থাকতে পারে না। এটিকে সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হতে হয়। গত ১৫ মাসে আমরা বিচারব্যবস্থার স্বায়ত্তশাসন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও জনগণের বিচারপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছি, যা এখনও চলমান।”

তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, সংস্কারের মূল লক্ষ্য প্রশাসনিক নয়, বরং নৈতিক, যাতে প্রতিষ্ঠান ক্ষমতাকে নয়, মানুষকে সেবা দেয় এবং বিচার বিভাগ জনগণের আস্থার নৈতিক অভিভাবকে পরিণত হয়।

উল্লেখযোগ্যভাবে, অনুষ্ঠানটি শুধু একাডেমিক উদযাপন নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রভাবের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। প্রধান বিচারপতি বলেন, ইতিহাস আমাদের অর্জনের মানদণ্ড নয়, বরং প্রচেষ্টার সততা ও নিষ্ঠার মানদণ্ড হিসেবে মূল্যায়ন করে। এই বার্তাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভবিষ্যতের মূলভিত্তি।

অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, এবং এতে সভাপতিত্ব করেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস।

কেএমএ

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত