ঢাকা, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২

ঢাবি ছাত্র সাম্য হত্যা: সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

২০২৫ নভেম্বর ০৮ ১৩:৫২:৪৩

ঢাবি ছাত্র সাম্য হত্যা: সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডে সাতজন মাদক কারবারির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তদন্তে উঠে এসেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বিক্রির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে পরিকল্পিতভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় সাম্যকে।

শনিবার ডিবির ইন্সপেক্টর ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আখতার মোর্শেদ জানান, এ ঘটনায় সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে এবং চারজনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ এবং মো. রবিন। অন্যদিকে, সুজন সরকার, তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক ও পলাশ সরদারকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

শাহরিয়ার আলম সাম্য ছিলেন ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক। গত ১৩ মে রাতে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে যান। সেখানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী কবুতর রাব্বিকে হাতে ট্রেজারগান নিয়ে দেখতে পান এবং থামতে বলেন। রাব্বি দৌড়ে পালিয়ে গেলে সাম্য ও তার বন্ধুরা তাকে ধাওয়া করে গোল পুকুর এলাকায় ধরে ফেলে। তখন ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে মেহেদী ও তার সহযোগীরা এসে সাম্যকে আক্রমণ করে। রাব্বি হাতে থাকা সুইচগিয়ার ছুরি দিয়ে সাম্যের উরুতে আঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তদন্তে জানা গেছে, মেহেদী হাসান উদ্যানে গাঁজা বিক্রেতাদের মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন। তার সহযোগী রাব্বি, রিপন, পাপেলসহ অন্যরা মাদক বিক্রি করে নিয়মিত টাকা জমা দিতেন। সাম্য ও তার বন্ধুরা মাদক বিক্রি বন্ধে বাধা দেওয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়, যার পরিণতিতেই ঘটে এই হত্যাকাণ্ড।

তদন্ত কর্মকর্তা আখতার মোর্শেদ চার্জশিটে উল্লেখ করেন, সাম্য হত্যাকাণ্ডটি ছিল সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত। আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণ চালিয়ে সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৪৩/৩০২/৩২৩/৫০৬/৩৪ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ধারায় একাধিক ব্যক্তি মিলে বেআইনি সংঘ গঠন, হত্যাকাণ্ড ও ভয় দেখানোর মতো অপরাধে জড়িত থাকলে সবাইকে অভিন্নভাবে দায়ী ধরা হয়।

চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, অভিযুক্ত সুজন সরকার ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি। তিনি কাকতালীয়ভাবে আহত সাম্যকে দেখেন এবং পরে সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেন। অন্য তিনজন তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক ও পলাশ সরদার সেসময় পথচারী হিসেবে আহত হলেও তাদের সঙ্গে হত্যাকারী বা ভুক্তভোগীর কোনো সম্পর্ক ছিল না।

ঘটনার পরদিন ১৪ মে সাম্যের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ মামলার চার্জশিট দাখিল করে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত