ঢাকা, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

পাঁচ ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা কী পাবেন? জানালেন গভর্নর

২০২৫ নভেম্বর ০৫ ২০:৪৯:১১

পাঁচ ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা কী পাবেন? জানালেন গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক: আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংককে অকার্যকর ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, একই সঙ্গে মার্জার বা একীভূত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এই ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে প্রশ্ন উঠেছে—একীভূত হওয়ার পর শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারের মূল্য কী হবে। বুধবার (০৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

গভর্নর জানান, এই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য বর্তমানে নেগেটিভ, তাই তাদের শেয়ারকে শূন্য (জিরো) হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কাউকেই কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক যেমন লাভে অংশ নেন, তেমনি ক্ষতির দায়ও নিতে হয়। এখানে শেয়ারহোল্ডারদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, কেবল শেয়ারমূল্য শূন্য ধরা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অন্য দেশে হলে এই অবস্থায় শেয়ারহোল্ডারদের জরিমানা করা হতো। বর্তমানে পাঁচ ব্যাংকের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ঋণাত্মক, কিছু ক্ষেত্রে ৪২০ টাকা পর্যন্ত নেগেটিভ।

পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীরা চলতি নভেম্বর মাসের শেষের দিকে তাদের আমানত তুলতে পারবেন। প্রথম ধাপে যারা ২ লাখ টাকার নিচে আমানত রাখেছেন, তারা অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। যারা ২ লাখ টাকার উপরে আমানত রেখেছেন, তাদের জন্য শীঘ্রই আলাদা নির্দেশনা জারি করা হবে। গভর্নর জানান, ব্যাংকগুলো এখন সরকারের অধীনে থাকলেও আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ।

তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, একীভূত হলেও ব্যাংকগুলো বেসরকারি ব্যাংকের মতোই পরিচালিত হবে। স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে, গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। পূর্বনির্ধারিত নামেই ব্যাংকগুলোতে পেমেন্ট, আমদানি-রপ্তানির এলসি খোলা যাবে, আমানত ও চেক নিষ্পত্তি হবে এবং রেমিট্যান্স কার্যক্রম সচল থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়োগও ঘোষণা করা হয়েছে। এক্সিম ব্যাংকে শওকাতুল আলম, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে সালাহ উদ্দিন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে মো. মোকসুদুজ্জামান এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে মোহাম্মদ আবুল হাসেম প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

তথ্য অনুযায়ী, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের মোট মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে সরকার সরবরাহ করবে ২০ হাজার কোটি টাকা, এবং ১৫ হাজার কোটি টাকা শেয়ার হবে আমানতকারীদের। একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকে ৭৫ লাখ আমানতকারীর জমা আছে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা, যেখানে ঋণ রয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যার ৭৬ শতাংশ খেলাপি।

গত ৯ অক্টোবর সরকারি মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক গঠনের অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সরাসরি আর্থিক সংকট, তারল্য ঘাটতি, শ্রেণি করা ঋণ ও মূলধন ঘাটতি থাকার কারণে ব্যাংকগুলো কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় ছিল।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত