ঢাকা, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

শেয়ারবাজারই হতে পারে ওষুধ শিল্পের নতুন প্রাণশক্তি: ডিএসই চেয়ারম্যান

২০২৫ নভেম্বর ০৫ ১৭:৫৮:১৯

শেয়ারবাজারই হতে পারে ওষুধ শিল্পের নতুন প্রাণশক্তি: ডিএসই চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রেখে ২০২৫ সালের মধ্যে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ২৫৭টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও কার্যকরী ওষুধ কোম্পানি রয়েছে, যাদের উত্পাদিত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে। জাতীয় অর্থনীতিতে এই শিল্পের অবদানও উল্লেখযোগ্য—বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১.৮৩ শতাংশ আসে ফার্মাসিউটিক্যাল খাত থেকে।

তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই খাত এখনো কিছু অন্তর্নিহিত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের শেয়ারবাজার হতে পারে অন্যতম প্রধান সহায়ক শক্তি। শেয়ারবাজারের মাধ্যমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং নতুন উৎপাদন সুবিধা স্থাপন সম্ভব।

এই প্রেক্ষাপটেবুধবার (০৪ নভেম্বর ২০২৫) গুলশানে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি (বিএপিআই)-এর কার্যালয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও বিএপিআই-এর মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। অপরদিকে, বিএপিআই-এর নির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভায় সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির।

আব্দুল মুক্তাদির বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেয়ারবাজারকে আরও গতিশীল ও আস্থাশীল করতে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের সরবরাহ, নীতিগত স্থিতিশীলতা এবং কর কাঠামোর সামঞ্জস্য নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে বেসরকারি খাতের ঋণগ্রহণের হার ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে এবং টানা তৃতীয় মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও নিম্নমুখী। অথচ দেশের অর্থনীতি মূলত বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল।

তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি আস্থা ফিরিয়ে আনতে নীতি, আইন ও বিধিমালায় ঘন ঘন পরিবর্তন না আনা উচিত। নীতিগত ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব। মুক্তাদির মনে করেন, বর্তমানে পাবলিক ও প্রাইভেট কোম্পানির করহার প্রায় সমান হওয়ায় তালিকাভুক্তির প্রণোদনা কমে গেছে। তাই পাবলিক কোম্পানিগুলোর জন্য কর সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে আরও প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে আসে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের শেয়ারবাজারকে আরও কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গ্রোথ-ওরিয়েন্টেড করার লক্ষ্যে ডিএসই একটি রূপান্তর যাত্রার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা চাই শেয়ারবাজার যেন দেশের অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সরবরাহের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়।”

তিনি জানান, অতীতে নানা অনিয়ম ও অদক্ষতার কারণে শেয়ারবাজার কাঙ্ক্ষিত গতিতে বিকশিত হয়নি, তবে সরকার এখন ব্যাংক-নির্ভর অর্থনীতি থেকে ব্যালান্সড ফাইনান্সিয়াল সিস্টেমে রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছে। এজন্য ডিএসই এখন গ্রোথ-ওরিয়েন্টেড, সার্ভিস-ড্রিভেন ও কাস্টমার-সেন্ট্রিক শেয়ারবাজার গড়ার পথে কাজ করছে।

মমিনুল ইসলাম বলেন, আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে ব্লু-চিপ কোম্পানির আবেদন দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি তথ্যপ্রবাহ ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য ডিএসই সেন্ট্রাল ইনফরমেশন আপলোড সিস্টেম চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তিনি জানান, বর্তমানে ডিএসই-তে ৩৪টি ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যাল কোম্পানি তালিকাভুক্ত, যার মধ্যে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বাজারমূল্যের দিক থেকে শীর্ষে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ওষুধ এখন দেশের মোট চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করছে।

ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএপিআই সেক্রেটারি জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে, তবে অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্সের সুবিধা নিতে পারছে না। তিনি বলেন, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির অন্যতম বড় সুবিধা হলো স্বচ্ছতা ও কর সুবিধা, যা বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়ায়।

সভায় ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান জানান, বর্তমানে ডিএসই তিনটি প্ল্যাটফর্মে লিস্টিং সুবিধা দিচ্ছে—মূল বোর্ড, এসএমই বোর্ড ও অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (ATB)। এর মধ্যে ATB ক্ষুদ্র ও উদীয়মান উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প আন্তর্জাতিকভাবে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। যদি আরও প্রতিষ্ঠান মূল বোর্ড, এসএমই বোর্ড বা এটিবিতে আসে, তবে তাদের প্রবৃদ্ধি ও স্বচ্ছতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, “ভালো উদ্যোক্তারা যদি বাজারে না আসে, তবে দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো সুযোগ নেয়। এখন সময় এসেছে সৎ ও সক্ষম উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার।”

ডিএসই পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (অব.) বলেন, বিশ্বের বড় সব ওষুধ কোম্পানি নিজ নিজ দেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত। তালিকাভুক্তি স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও আস্থার প্রতীক।

রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, কোনো কোম্পানি তার অর্জিত মুনাফাকে কতটা সঠিকভাবে কাজে লাগাচ্ছে—সেটিই প্রতিষ্ঠানটির টেকসইতা নির্ধারণ করে। তিনি জানান, ডিএসই কাঠামোগত পরিবর্তনের পথে রয়েছে এবং বড় কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ বাড়লে বাজার আরও শক্তিশালী হবে।

রেনাটা পিএলসি’র সিইও সৈয়দ এস. কায়সার কবির বলেন, লিস্টিংয়ের মূল সুবিধা হলো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বৃদ্ধি। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা লিস্টেড কোম্পানিগুলোকে নির্ভরযোগ্য মনে করেন, যা বাজারে আস্থা আনে।

বাংলাদেশ ল্যাম্পস পিএলসি’র সিইও সিমিন রহমান বলেন, উচ্চ সুদের হার ও মুদ্রার অবমূল্যায়নে ব্যবসায়ীরা বর্তমানে চাপে আছেন। তবে ভবিষ্যতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এগ্রোকেমিক্যাল খাতেও শেয়ারবাজারে যুক্ত হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়লে নন-লিস্টেড প্রতিষ্ঠানগুলোও বাজারে আগ্রহী হবে।

হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিইও মোহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, বড় কোম্পানিগুলোর সম্প্রসারণে উল্লেখযোগ্য ফান্ডের প্রয়োজন, যা ব্যাংকের পরিবর্তে ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে সংগ্রহ করলে ব্যয় ও ঝুঁকি কমবে।

পরিশেষে, ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, “পরিবর্তন আসবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা, আস্থা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।”

সালাউদ্দিন/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

কিউএস র‌্যাঙ্কিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ১৭তম ঢাবি

কিউএস র‌্যাঙ্কিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ১৭তম ঢাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) এশিয়া ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে এবারও শীর্ষ স্থান অধিকার... বিস্তারিত