ঢাকা, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২

ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল: রাজনীতির নতুন সমীকরণ না ওয়েক-আপ কল?

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৪ ১৬:২২:২০

ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল: রাজনীতির নতুন সমীকরণ না ওয়েক-আপ কল?

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা, বিতর্ক ও বিশ্লেষণ। একদিকে রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত, অন্যদিকে প্রধান ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্বাচনের ফলাফল হয়তো রাজনীতিকে পুরোপুরি ওলটপালট করে দেবে না, তবে এটিকে ‘ওয়েক-আপ কল’ হিসেবে না দেখার সুযোগ নেই।

বিশিষ্ট ভারতীয় কূটনীতিক ও বিশ্লেষক শশী থারুর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের অতীত ও বর্তমান কর্মকাাণ্ডে অনেক ভোটার বিরক্ত, যা ভোটের বাক্সে স্পষ্ট প্রতিফলন ঘটিয়েছে। শিবির তথা জামায়াতপন্থী প্রার্থীদের এই অপ্রত্যাশিত উত্থানকে কেউ কেউ বলছেন ‘ভোট বিপ্লব’।অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ছাত্রদলের কৌশলগত ভুল, প্রার্থী নির্বাচনে বিচক্ষণতার অভাব এবং মাঠপর্যায়ে কার্যকর উপস্থিতির ঘাটতি তাদের ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল বাইরের জনপ্রিয়তা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সমর্থনের ওপর ভরসা করেছিল, কিন্তু বাস্তব ভোটব্যবস্থায় তা যথেষ্ট ছিল না।

শিবিরের দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি, মানবিক কৌশল এবং প্রার্থীদের নির্ভুল নির্বাচন ছিল তাদের বিজয়ের মূল ভিত্তি। এক বছর আগে থেকেই তারা ভোটারদের ডেটাবেজ তৈরি করে, বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে এবং ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলে। এমনকি ভোটের আগে উপহার প্রদান এবং পারিবারিক যোগাযোগের কৌশল তাদের পক্ষেই কাজ করেছে।বিশ্লেষকদের মতে, ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জামায়াত একপ্রকার রাজনৈতিক ফিরে আসার আভাস দিয়েছে। যদিও জাতীয় রাজনীতিতে তাদের নিষ্ক্রিয়তা অব্যাহত রয়েছে, কিন্তু ছাত্র রাজনীতিতে এই উত্থান নতুন বার্তা দিচ্ছে। জামায়াত বর্তমানে আরও কয়েকটি দল নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যা ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিরই ইঙ্গিত হতে পারে।

আওয়ামী লীগের ভূমিকা ছিল নীরব। নির্বাচন ঘিরে দলটির আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না। ভোটের কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে তারেক রহমান ও প্রফেসর ইউনূসের সমালোচনার ভাষা ছিল প্রায় অভিন্ন, যা অনেকের কাছেই তাৎপর্যপূর্ণ লেগেছে। এ ছাড়া, সাদা দলের শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, ভোট গণনায় ব্যবহৃত বিতর্কিত OMR মেশিন এবং ভোটার তালিকা প্রকাশের বিষয়েও অনেক প্রশ্ন উঠেছে।

ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল বিএনপির জন্য একটি কঠিন বাস্তবতা উপস্থাপন করেছে। দলটির কৌশলগত ভ্রান্তি, সিদ্ধান্তহীনতা এবং মাঠপর্যায়ের তৎপরতার অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে সহানুভূতিশীল প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনার চেষ্টা থাকলেও বিএনপি সাড়া দেয়নি। এমনকি জামায়াত নেতা শিশির মনির, যিনি তারেক রহমানের আইনজীবী ছিলেন, তাকে নিয়ে ছাত্রদলের ব্যঙ্গমূলক আচরণ দলীয় ঐক্যের অভাবকে স্পষ্ট করে তুলেছে।

ডাকসু নির্বাচনের ফলে এটাই স্পষ্ট—ছাত্ররাজনীতির তরুণ প্রজন্ম এখন আর আগের মতো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য দেখায় না। তারা কৌশল, কর্মকাাণ্ড, এবং বাস্তব সহানুভূতির মূল্যায়ন করে ভোট দেয়। সুতরাং, বিএনপি বা আওয়ামী লীগ—দু'দলেরই এখন সময় এসেছে বাস্তবতা মেনে নিয়ে কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করার।তবে এটাও মনে রাখতে হবে, ডাকসু নির্বাচনে জয় মানেই জাতীয় রাজনীতিতে বিজয় নয়। অতীতে অনেক ডাকসু নেতা জাতীয় রাজনীতিতে জায়গা করে নিতে পারেননি। উদাহরণ হিসেবে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম কিংবা মাহমুদুর রহমান মান্নার কথা বলা যায়। ফলে এই নির্বাচনের ফলাফলকে অতিরঞ্জিত না করে ভবিষ্যতের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা হিসেবে নেওয়াই যুক্তিসংগত।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত