ঢাকা, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২

গাজী'র শূন্যস্থান পূরণ করবে মেঘনা: দেশের টায়ার শিল্পে নতুন দিগন্ত

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৪ ১৪:৩২:৫৮

গাজী'র শূন্যস্থান পূরণ করবে মেঘনা: দেশের টায়ার শিল্পে নতুন দিগন্ত

বিশেষ প্রতিবেদন: গাজী অটো টায়ারস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দেশের ভারী যানবাহনের টায়ার শিল্পে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তা পূরণে এগিয়ে এসেছে মেঘনা গ্রুপ। তাদের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মেঘনা ইনোভা রাবার কোম্পানি লিমিটেড টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে একটি অত্যাধুনিক প্ল্যান্ট চালু করেছে, যা দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা কমাতেও সহায়তা করবে। এই সাহসী পদক্ষেপ দেশের শিল্প খাতে এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

মেঘনা ইনোভার চিফ অপারেটিং অফিসার লুৎফুল বারি সম্প্রতি এক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, "আমাদের লক্ষ্য হলো মোটরসাইকেলের টায়ারের মতো ভারী যানবাহনের টায়ার উৎপাদনেও বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা।" তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, সরকারের নীতিগত সহায়তা পেলে এই খাতে আমদানির প্রয়োজন পুরোপুরি দূর করা সম্ভব। এটি শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই নয়, দেশের শিল্প সক্ষমতাকেও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

ব্যাপক বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ

শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের ভারী যানবাহনের টায়ারের বাজার প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার, যার ৯০ শতাংশের বেশি চাহিদা আমদানি করে মেটানো হয়। এই বিশাল বাজারে মেঘনার প্রবেশ দেশের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এসেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চালু হওয়া এই প্ল্যান্টে জার্মানি, ইতালি এবং চীনের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানের টায়ার উৎপাদনে সক্ষম।

ইতিমধ্যে, এই প্রকল্পে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং এটি ১ হাজার ৫০০ শ্রমিককে কর্মসংস্থান দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে, আরও ৩০০টি নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে, যা স্থানীয় অর্থনীতির জন্য একটি বড় ইতিবাচক দিক। ২০২৬ সালের মধ্যে মোট বিনিয়োগ ২ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হবে এবং আরও ৫০০ নতুন চাকরি তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই বিনিয়োগ শুধু উৎপাদন সক্ষমতাই বাড়াবে না, হাজার হাজার মানুষের জীবিকারও নিশ্চয়তা দেবে।

নীতিগত সহায়তা ও ভবিষ্যতের পথচলা

লুৎফুল বারি জানান, স্থানীয় টায়ার শিল্প এখনও আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার মুখে রয়েছে। তিনি বলেন, "আমদানি করা কৃষি টায়ার শুল্ক ও ভ্যাট ছাড়াই আসে, অথচ আমাদের কাঁচামাল এবং উৎপাদিত পণ্যে উভয়ই দিতে হয়।" এই বৈষম্য দূর করতে তিনি আমদানি করা কৃষি টায়ারের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ অথবা স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যে ভ্যাট মওকুফের অনুরোধ করেছেন। এতে দেশীয় শিল্প আরও শক্তিশালী হবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, গ্যাস সংযোগ পেলে তাদের উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে, যা তাদের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। দেশীয়ভাবে উৎপাদিত টায়ার আমদানি করা টায়ারের চেয়ে প্রতিটিতে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা সাশ্রয়ী, যা সাধারণ মানুষের জন্যও একটি বড় সুবিধা।

মেঘনা ইনোভা তাদের উৎপাদনকে টেকসই করতে স্থানীয়ভাবে রাবার সংগ্রহ করে, পুরোনো টায়ার পুনর্ব্যবহার করে এবং ছাদের ওপর সৌর প্যানেল স্থাপন করে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করছে। লুৎফুল বারি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে, সঠিক নীতিগত সহায়তা পেলে বাংলাদেশ ট্রাক, বাস এবং কৃষি যানবাহনের টায়ার উৎপাদনে সম্পূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত