ঢাকা, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২
রাজনীতির পরিবর্তন চায় বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম

ড. মো. শরিফুল ইসলাম দুলু
বিশেষজ্ঞ,সিপিআইটি

ড. মো. শরিফুল ইসলাম দুলু:বাংলাদেশ শুধু ইতিহাসের পাতায় নয়, জনসংখ্যার কাঠামোয়ও এক নবীন জাতি। দেশের অর্ধেকেরও বেশি নাগরিকের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। এই তারুণ্যের শক্তি আজ ছড়িয়ে আছে সর্বত্র—বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোর থেকে শুরু করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের প্রতিটি কোণায়। তারা স্বপ্ন দেখছে এক নতুন বাংলাদেশের, যা আগামী এক দশকে নিজেদের হাতেই নির্মাণ করতে চায়। এখন মূল প্রশ্ন হলো—এই প্রজন্ম রাজনীতির কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করে? আর রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণে কতটা প্রস্তুত?
রাজনীতি নিয়ে তরুণদের মনোভাব
আজকের তরুণ প্রজন্ম ঐতিহ্যবাহী, স্লোগান-নির্ভর রাজনীতিতে তেমন আগ্রহী নয়। তারা চায় বাস্তব ফলাফল-নির্ভর সমাধান। তারা মনে করে, রাজনীতি শুধুমাত্র ক্ষমতার লড়াই বা রাজপথের বিক্ষোভে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। বরং এর মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, পরিবেশ ও নিরাপত্তার মতো বাস্তব সমস্যাগুলোর সমাধান হওয়া জরুরি। অনেক তরুণ মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতি ব্যক্তি-কেন্দ্রিক, স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং সেখানে তাদের জন্য অর্থবহ অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রত্যাশা
তরুণদের প্রথম এবং প্রধান প্রত্যাশা হলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। তারা চায় দলগুলো তাদের প্রচারণার অর্থের উৎস এবং জনগণের টাকা কীভাবে খরচ হচ্ছে, তা প্রকাশ করুক। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো কতটা পূরণ হচ্ছে, সে বিষয়ে তারা নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য দেখতে চায়।
দ্বিতীয়ত, তারা চায় অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তি। তরুণ নেতৃত্ব যেন কেবল প্রতীকী না হয়, বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের প্রকৃত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। দলগুলোর উচিত নীতি প্রণয়নে তরুণদের যুক্ত করা, আলোচনার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা এবং নতুন ও যোগ্য নেতৃত্বের জন্য জায়গা করে দেওয়া।
তৃতীয়ত, তারা একটি ভবিষ্যৎ-কেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা চায়। মানসম্মত শিক্ষা, উদ্ভাবন-বান্ধব নীতি, স্টার্টআপদের জন্য সহায়তা, সবুজ অর্থনীতির উদ্যোগ এবং স্মার্ট শহর—এগুলো সবই তরুণদের চাওয়ার তালিকায় রয়েছে।
প্রযুক্তি, পরিবেশ ও কর্মসংস্থান
এই প্রজন্ম প্রযুক্তিতে অত্যন্ত দক্ষ। তারা চায় সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো যেন প্রযুক্তি ব্যবহার করে শাসনব্যবস্থাকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করে তোলে। অনলাইন ভোটার নিবন্ধন, ডিজিটাল টাউন হল, ব্লকচেইন-ভিত্তিক নিরাপদ ভোট ব্যবস্থা—এগুলো তাদের কাছে ভবিষ্যতের স্বপ্ন নয়, বরং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য পদক্ষেপ।
জলবায়ু পরিবর্তন তরুণ প্রজন্মের কাছে কোনো বিমূর্ত ধারণা নয়, এটি তাদের ভবিষ্যৎ। তারা আশা করে রাজনৈতিক দলগুলো এই সংকটকে গুরুত্ব সহকারে নেবে, শক্তিশালী সবুজ জ্বালানি নীতি গ্রহণ করবে, কার্বন নিঃসরণ কমাবে এবং নদী ও বন রক্ষা করবে।
কর্মসংস্থান এই প্রজন্মের অন্যতম প্রধান দুশ্চিন্তা। তারা এমন অর্থনৈতিক নীতি চায় যা কর্মসংস্থান তৈরি করবে, কর্মীদের দক্ষতা বাড়াবে এবং বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন
সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তরুণরা বিষাক্ত ও সংঘাতপূর্ণ রাজনীতির অবসান চায়। তারা সহিংসতা, সড়ক অবরোধ এবং অন্তহীন দোষারোপের রাজনীতিতে ক্লান্ত। তারা চায় নীতি-নির্ভর বিতর্ক, টেলিভিশনে আলোচনা এবং সমাধান-কেন্দ্রিক নির্বাচনী প্রচারণা। তাদের কাছে রাজনীতি হওয়া উচিত আদর্শের লড়াই, ব্যক্তিগত আক্রমণের নয়।
এই প্রজন্মের প্রত্যাশা, তাদের ভোটের যেন মূল্য থাকে। তারা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরাপদ নির্বাচন চায়, যা তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে। যদিও দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং মেধার মূল্যায়ন না হওয়া অনেক প্রতিভাবান তরুণকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখছে, তবুও দলগুলো যদি যোগ্য তরুণদের জন্য ন্যায্য সুযোগ তৈরি করে, তবে তারা নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এই তরুণ প্রজন্মের হাতে। তারা প্রযুক্তি-সচেতন, বিশ্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং সমাধান-মুখী। যদি রাজনৈতিক দলগুলো তাদের আস্থা অর্জন করতে পারে, তাদের জন্য জায়গা তৈরি করে দিতে পারে এবং বাস্তব সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দেয়, তাহলে রাজনীতি স্বাভাবিকভাবেই আরও গঠনমূলক, উদ্ভাবনী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে উঠবে।
ড. মো. শরিফুল ইসলাম দুলু
বিশেষজ্ঞ, সেন্টার ফর পলিটিক্যাল ইনোভেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (সিপিআইটি)
এবং
সদস্য, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (ডুয়া)
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- সাবেক কর্মীদের ১৮২৩ কোটি টাকা আটকে রেখেছে ম্যারিকো
- শেয়ার কারসাজিতে ৫ বিনিয়োগকারীকে ১৩ কোটি টাকা জরিমানা
- এক হাজার কোটি টাকার মামলায় শিবলী রুবাইয়াত গ্রেপ্তার
- তালিকাচ্যুতির ঝুঁকিতে অলিম্পিক এক্সেসরিজ
- শেয়ারবাজারে প্রতারণা ঠেকাতে মাঠে নামছে গোয়েন্দা সংস্থা
- সরকারের সিদ্ধান্তে ডুবছে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বপ্ন?
- শেয়ার কারসাজিতে ১২ জনকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা
- তিন কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা
- সর্বোচ্চ চাহিদায় নাগালের বাইরে ১৪ প্রতিষ্ঠান
- আরএসআই বিশ্লেষণে সর্বোচ্চ সতর্ক সংকেত পাঁচ শেয়ারে
- কৃত্রিম চাপে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা, সহসা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা
- এক কোম্পারি অস্থিরতায় শেয়ারবাজারে তোলপাড়
- মুনাফা বাড়াতে নতুন পরিকল্পনা: ঘুরে দাঁড়াচ্ছে হাক্কানী পাল্প
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ইস্টার্ন হাউজিং
- পাঁচ কোম্পানির কারণে থমকে গেল শেয়ারবাজারের উত্থান