ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২

'ঢালাও বোনাস' বন্ধ হচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৯ ২১:২৮:৫৫

'ঢালাও বোনাস' বন্ধ হচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আর আর্থিক শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে ঢালাওভাবে কর্মচারীদের উৎসাহ বোনাস দেওয়া যাবে না। নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, বোনাস প্রদানের ভিত্তি হবে পরিচালন মুনাফা নয়, নিট মুনাফা।

এ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মুনাফা অর্জনের পর প্রথমে সরকারকে ডিভিডেন্ড দিতে হবে। সরকারের কাছে ডিভিডেন্ড না দিলে, বোনাস প্রদানের যোগ্যতা থাকলেও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তা দাবি করতে পারবে না।

গভর্নরের বক্তব্যের পর নড়েচড়ে বসলো মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত ৬ সেপ্টেম্বর সতর্ক করে বলেন, কোনো ব্যাংকের মূলধন ১০ শতাংশের নিচে নেমে গেলে বা প্রভিশন লস করলে, সেক্ষেত্রে ডিভিডেন্ড কিংবা বোনাস কোনোটিই দেওয়া যাবে না। তিনি আরও জানান, তিন মাসের ঋণ অনাদায়ী থাকলে তা নন-পারফর্মিং লোন ধরা হবে।

গভর্নরের বক্তব্যের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ দ্রুত একটি নির্দেশিকার খসড়া তৈরি করেছে। এতে ১৪টি রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বোনাস প্রদানের শর্তাবলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

নতুন নির্দেশিকার কাঠামো

খসড়া অনুযায়ী, পরিচালন মুনাফা থেকে বিভিন্ন প্রভিশন বাদ দিয়ে নিট মুনাফা হিসাব করতে হবে। এর ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে উৎসাহ বোনাস। ২০২৪ সালের বোনাস প্রদানের ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর হবে। তবে এর বাইরে অতিরিক্ত বোনাস দিতে হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক জানিয়েছেন, অতীতে বোনাস প্রদানে শৃঙ্খলার ঘাটতি ছিল। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই এবার অভিন্ন নির্দেশিকা করা হচ্ছে।

অতীতের অনিয়মের নজির

আগে নীতিমালা থাকলেও কিছু ব্যাংক তা মানেনি। উদাহরণস্বরূপ— সর্বোচ্চ তিনটি বোনাস দেওয়ার বিধান থাকলেও সোনালী ব্যাংক ২০২৩ সালে পাঁচটি বোনাস দেয়। এ কারণে গত মার্চে অর্থ মন্ত্রণালয় সোনালী ব্যাংকের এমডিকে চিঠি দিয়ে অতিরিক্ত বোনাস ফেরত আনার নির্দেশ দেয়, যদিও ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কর্মীরা সেই অর্থ ফেরত দেননি।

কর্মসম্পাদন সূচক নির্ধারণ

রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংক (সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল) পাঁচটি কর্মসম্পাদন সূচকের ভিত্তিতে বোনাস পাবে। সূচকগুলো হলো—১. চলতি মূলধনের ওপর নিট মুনাফার হার

২. আমানতের প্রবৃদ্ধি

৩. ঋণ ও অগ্রিমের প্রবৃদ্ধি

৪. খেলাপি ঋণ আদায়ের হার

৫. অবলোপন করা ঋণ আদায়ের হার

সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব থাকবে নিট মুনাফার হারে, যার মান ৫০-এর বেশি। ভালো পারফরম্যান্স করলে সর্বোচ্চ তিনটি বোনাস পাওয়া যাবে। কম নম্বর পেলে বোনাস কমে যাবে, এমনকি একেবারেই নাও থাকতে পারে। প্রতিটি বোনাস মানে হলো কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতন।

বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা নিয়ম

ছয় বিশেষায়িত ব্যাংক (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাকাব, কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও আনসার-ভিডিপি ব্যাংক) চারটি সূচকের ভিত্তিতে মূল্যায়িত হবে। এখানে আমানতের সূচক বাদ যাবে।

অন্যদিকে, আইসিবির জন্য থাকবে বিশেষ সূচক— যেমন শেয়ারবাজারে লেনদেন বৃদ্ধি, নিট মুনাফা, বিনিয়োগের বিপরীতে ডিভিডেন্ড এবং খেলাপি ঋণ আদায়।

বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) ক্ষেত্রে সূচক ভিন্ন হবে। এখানে বিবেচনায় আসবে— ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের বিপরীতে প্রকৃত আদায়ের হার, নিট মুনাফা, খেলাপি ঋণ আদায় এবং ঋণ ও অগ্রিমের প্রবৃদ্ধি।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত