ঢাকা, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২

এক বছরে দেশে গুম বা পুলিশের মিথ্যা মামলা হয়নি: অ্যাটর্নি জেনারেল

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৮ ২১:৫৫:১৮

এক বছরে দেশে গুম বা পুলিশের মিথ্যা মামলা হয়নি: অ্যাটর্নি জেনারেল

নিজস্ব প্রতিবেদক: অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান অন্তর্বর্তীকালীন এক বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে দাবি করেছেন যে, "গত এক বছরে বাংলাদেশের মাটিতে একজন মানুষও গুমের শিকার হননি" এবং "পুলিশ একটাও মিথ্যা-গায়েবি মামলা করেনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য।" তিনি জানান, ভিকটিমের পরিবারের দায়ের করা মিথ্যা মামলার প্রতিকার দিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ এর (ক) ধারা সংশোধন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে পুলিশ কমিশনার বা এসপি নিজস্ব তদন্তের মাধ্যমে গায়েবি মামলার প্রতিকার দিতে পারবেন।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা-২০২৫’ এর রাজশাহী পর্যায়ের চূড়ান্ত পর্বে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অ্যাটর্নি জেনারেল এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, "আমাদের দেশে সাংবিধানিক আইনের যে সংকট এখন তৈরি হয়েছে, তার বড় প্রশ্ন হলো আপনি নাগরিক হিসেবে আপনার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য আপনার ভোটের অধিকার কীভাবে নিশ্চিত করবেন। এটাই এখন সবচেয়ে মুখ্য প্রশ্ন।"

অ্যাটর্নি জেনারেল তার বক্তব্যে বিগত ১৭ বছরের চিত্র তুলে ধরে বলেন, "ভোটের অধিকার হরণ হয়েছিল বলেই বিগত ১৭ বছরে অসংখ্য-অগণিত মানুষ তাদের জীবনের সর্বস্ব হারিয়েছে।" তিনি তথ্যচিত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেন যে, বিগত ১৭ বছরে ৭০০ এর বেশি মানুষ গুমের শিকার হয়েছে, সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষ বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে এবং ৬০ লাখের বেশি মানুষ রাজনৈতিক নিপীড়ন ও গায়েবি মামলার শিকার হয়েছে, যার ৯৯ শতাংশের বেশি বাদী ছিল পুলিশ।

জুলাই বিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "জুলাই বিপ্লবে আমরা দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-তরুণকে জীবন দিতে দেখেছি। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।" তিনি গুম হওয়া মানুষের পরিবারের কষ্টের কথা তুলে ধরেন এবং "অপরাধের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত হবে তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে" বলে মন্তব্য করেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, "সংবিধান নাগরিকদের ইচ্ছার প্রতিফলন। নাগরিক হিসেবে আমি চাই নিঃশঙ্ক চিত্তে বাংলাদেশে বসবাস করতে। আমি চাই ন্যায়বিচার, জীবনের অধিকার, কথা বলার অধিকার, লিখতে পারার অধিকারসহ বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে।"

তিনি জুলাই বিপ্লবের পর "স্বৈরাচার হটিয়ে বাংলাদেশকে জনগণের বাংলাদেশে রূপান্তর করার" লক্ষ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং সংস্কারের নামে বিভিন্ন প্রস্তাবনা নিয়ে সতর্ক করে বলেন, "শুধু নিজের প্রস্তাবই সঠিক ভেবে অন্যের প্রস্তাবকে আমরা যেন উপেক্ষা না করি সেটাও ভাবতে হবে। তা না হলে জুলাই চেতনা, সাংবিধানিক ভাবনা ভূলুণ্ঠিত হবে।"

ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নিয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, "আমরা এমন এক বাংলাদেশ চাই, যেখানে জুলাই শহিদের রক্তের সঙ্গে কেউ বেইমানি করতে পারবে না। সাংবিধানিকভাবে আমরা এমন একটা যৌক্তিক জায়গায় পৌঁছাতে চাই যেখানে প্রতিটি শহিদের রক্তের মর্যাদা রক্ষিত হবে।" এ সময় রাজনৈতিক সমঝোতার পথ-পরিক্রমায় একটি আধুনিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ একরামুল হক, উপ-উপাচার্য ড. মো. ফরিদ উদ্দিন খান এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. শেখ মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন।

প্রতিযোগিতায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সময়োপযোগী, দূরদর্শী ও কার্যকর নীতি প্রস্তাবে তিন সদস্যবিশিষ্ট পাঁচটি দল অংশগ্রহণ করে। আজকের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জনকারী দলের নাম ছিল ‘টর্চলাইট’। প্রথম রানারআপ হয়েছে ‘দীপশিখা’ এবং দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে ‘চেঞ্জমেকার’ দল। অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথি বিজয়ীদের হাতে পদক, ক্রেস্ট ও পুরস্কারের চেক তুলে দেন।

এসপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত

জাতীয় এর অন্যান্য সংবাদ