ঢাকা, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বড় রদবদলের ইঙ্গিত

নিজস্ব প্রতিবেদক :বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে রয়েছেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে সভাপতি পদে আসীন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তার নেতৃত্বেই দলটি পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে এই দীর্ঘ সময়ে কখনোই তিনি প্রকাশ্যে তার অনুপস্থিতিতে দলের নেতৃত্ব কার হাতে যাবে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।
কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে তাকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলটির সংগঠন ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ ছিল উত্তরাধিকার পরিকল্পনার অনুপস্থিতি।
বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতের রাজধানী দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থান করছেন, যেখানে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রিত। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের রূপরেখা তৈরি করতে গিয়ে তিনি দলে বড় ধরনের রদবদলের পথে হাঁটছেন।
শেখ হাসিনা তার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং ভাগনে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিকে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করছেন।
জয় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করলেও বিদেশি সংবাদমাধ্যমে আওয়ামী লীগের পক্ষে নিয়মিত বক্তব্য দিচ্ছেন এবং দলের আন্তর্জাতিক বার্তা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
অন্যদিকে সায়মা ওয়াজেদ ভারতের মাটিতে মায়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। শেখ হাসিনার কর্মসূচি, ভাষণ তৈরিসহ বাইরের অতিথিদের সঙ্গে সাক্ষাৎপর্বে সায়মা সক্রিয়ভাবে যুক্ত।
রাদওয়ান মুজিব ববি গবেষণা এবং রাজনৈতিক বার্তা নির্মাণে ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন’ (CRI)-র মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক পদ থেকে ছুটিতে পাঠানোর পর সায়মা ওয়াজেদ পুরোপুরি রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেছেন।
বাংলাদেশ সরকারের অনাগ্রহ, দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগ এবং পদ নিয়ে বিতর্কের কারণে তাকে কার্যত বাধ্য হয়ে এ পথ বেছে নিতে হয়েছে।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পুনর্গঠনে ভারতের কংগ্রেস পার্টির রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর যুগল নেতৃত্ব মডেলকে অনুসরণ করছেন। রাহুল গান্ধী দল পরিচালনায় সামনে থাকেন, প্রিয়াঙ্কা তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে সহায়তা করেন।
ঠিক তেমনি শেখ হাসিনার কন্যা পুতুল মায়ের কাছাকাছি অবস্থান করে সমন্বয়ের কাজ করছেন এবং জয়কে রাখা হচ্ছে দলের মুখপাত্র ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য নেতা হিসেবে।
আওয়ামী লীগের বর্তমান কাঠামো এখন কার্যত তিন কেন্দ্রে পরিচালিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ রয়েছেন দিল্লিতে, সজীব ওয়াজেদ রয়েছেন আমেরিকার ভার্জিনিয়ায়, আর দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা কলকাতায় অবস্থান করছেন।
এই মুহূর্তে কলকাতা থেকেই দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তদারকি করছেন তিন নেতা: আসাদুজ্জামান খান কামাল, আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাসিম ও জাহাঙ্গীর কবির নানক।
তারা সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রেখে শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নে কাজ করছেন।
বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নতুন কাঠামোতে কার্যত গুরুত্ব হারিয়েছেন। ভারতে অবস্থান করলেও গত দশ মাসে তিনি শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ পাননি।
এই বাস্তবতা পরিষ্কার করছে, দলের পুরনো গার্ড ধীরে ধীরে সরিয়ে দিয়ে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এবং ভারতে কংগ্রেস—দুটিই দীর্ঘদিন ধরে পরিবারকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারক। শেখ হাসিনা সেই ঐতিহ্য বজায় রেখেই ফার্স্ট ফ্যামিলির সদস্যদের ওপর ভরসা রাখছেন।
তিনজনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তার সবচেয়ে সংকটময় সময় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এই রূপান্তর সফল হলে দলটি ভবিষ্যতের পথ খুঁজে পাবে, আর ব্যর্থ হলে নেতৃত্ব সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব পুনর্গঠন। জয়, পুতুল ও ববিকে ঘিরে গড়ে ওঠা নতুন ক্ষমতাকেন্দ্র পারিবারিক রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে আরও সুসংহত করছে।
তবে এ পথ কতটা মসৃণ হবে, তা নির্ভর করবে দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলটির গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক সক্ষমতার ওপর।
নয়ন
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- কোম্পানি পুরোদমে উৎপাদনে, তারপরও শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা!
- বিও অ্যাকাউন্টের ফি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সুখবর দিল বিএসইসি
- তালিকাচ্যুতির ঝুঁকিতে অলিম্পিক এক্সেসরিজ
- এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় ৫ কোম্পানি
- শেয়ারবাজারে দ্রুত মুনাফা তোলার ৫টি ট্রেডিং টিপস
- রবির মাধ্যমে দেশে আসছে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট
- সর্বোচ্চ চাহিদায় নাগালের বাইরে ১৪ প্রতিষ্ঠান
- তিন কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা
- শেয়ারবাজারে মিডল্যান্ড ব্যাংকের নতুন যাত্রা
- আট কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কাড়াকাড়ি
- নতুন উচ্চতায় অগ্রসর হচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার
- সর্বনিম্ন দামে আটকে গেল ৭ কোম্পানির শেয়ার
- সাবেক কর্মীদের ১৮২৩ কোটি টাকা আটকে রেখেছে ম্যারিকো
- চার জেডের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ আস্থা
- শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মাথাব্যথার ১১ শেয়ার