ঢাকা, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

১২ বছর অবৈধ চাকরির পর চাকরিচ্যুত ডা. ফাতেমা দোজা

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৫ ১৭:০০:৪৭

১২ বছর অবৈধ চাকরির পর চাকরিচ্যুত ডা. ফাতেমা দোজা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সরকারি চাকরিতে ২৫ বছরের মধ্যে ১২ বছর অবৈধভাবে দায়িত্ব পালন, বেতন-ভাতা গ্রহণ এবং একাধিক পদোন্নতি নেওয়ার অভিযোগে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজাকে চাকরিচ্যুত করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

ডা. ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকায় রয়েছে—গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলায় কারাবাসের তথ্য গোপন, স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েও দেড় বছর পর ফের যোগদান, বিদেশে সেমিনারে যোগদানের ভুয়া আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ এবং বিভিন্ন সময়ে অনুপস্থিত থাকা।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগে ২০২৩ সালে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গুরুদণ্ড হিসেবে বরখাস্তের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দ্বিতীয় কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সেই সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। পরবর্তীতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সম্মতি জানায় এবং রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে বরখাস্তের আদেশ অনুমোদন করেন।

এনআইসিভিডির পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, “যারা অনিয়মে জড়িত ছিল তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। সিস্টেমগত কারণে ব্যবস্থা নিতে সময় লাগছে, তবে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”

চাকরি ছাড়লেও অবৈধভাবে পদোন্নতি

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ডা. ফাতেমা ২০০৭ সালে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে রেডিওলজিস্ট হিসেবে যোগ দেন। পরে ২০০৯ সালে মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ পান। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি বিএসএমএমইউতে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেয়ে স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি ছাড়ার আবেদন করেন।

তবে মেয়াদ শেষে তার নিয়োগ স্থায়ী হয়নি। তবুও এক বছর ছয় মাস পর তদবির ও জালিয়াতির মাধ্যমে ফের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে যোগ দেন এবং ২০১৩ সালে অবৈধভাবে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি নেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে সহযোগী অধ্যাপক পদেও উন্নীত হন।

জাল আমন্ত্রণপত্র কেলেঙ্কারি

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে অনুষ্ঠেয় রেডিওলজি সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকার (আরএসএনএ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য জমা দেওয়া তার আমন্ত্রণপত্রে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। আয়োজক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানতে পারে, আমন্ত্রণপত্রে ব্যয়ের তথ্য পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। পুনরায় তাগিদ দেওয়ার পরও তিনি নীরব থাকেন, ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা গঠন করা হয়।

গৃহকর্মী নির্যাতন মামলার তথ্য গোপন

২০০৪ সালে ১০ বছরের গৃহকর্মীকে গরম ইস্ত্রি দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে ডা. ফাতেমার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু চাকরি বিধি অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার কথা থাকলেও তিনি পূর্ণ বেতন-ভাতা গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে এ তথ্য গোপন রেখে পদোন্নতি লাভ করেন।

বিভাগীয় তদন্তের ফল

২০২৩ সালে দায়ের করা বিভাগীয় মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব আনোয়ার হোসাইন আকন্দ তার বিরুদ্ধে আনা প্রতিটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। এরপর দ্বিতীয়বার কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠিয়ে চূড়ান্ত বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ইএইচপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত