ঢাকা, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

গাজায় আশ্রয়হীন মানুষের কান্না, একদিনে নিহত আরও ৭৫

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৫ ১০:৪৩:৩০

গাজায় আশ্রয়হীন মানুষের কান্না, একদিনে নিহত আরও ৭৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে দিশেহারা গাজার মানুষ প্রতিদিন নতুন করে মৃত্যুভয়ে আচ্ছন্ন হচ্ছেন। অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় টানা বিমান ও স্থল হামলায় দিন দিন বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। সর্বশেষ একদিনে অন্তত ৭৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে, যার মধ্যে শুধু গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৪৪ জন। লাগাতার বোমাবর্ষণে শহরটি রূপ নিয়েছে এক আতঙ্কগ্রস্ত নগরীতে।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েলি বাহিনীর অবিরাম গোলাবর্ষণে গাজা সিটির পাড়া-মহল্লা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। কেউ আশ্রয়ের খোঁজে পালালেও উপত্যকার কোথাও মিলছে না নিরাপত্তা। টানা ২৩ মাস ধরে চলা এই হামলায় পুরো শহর ভরে উঠেছে ধ্বংস আর শোকে।

ইউনিসেফ ইতোমধ্যেই গাজা সিটিকে অভিহিত করেছে ‘আতঙ্কের নগরী’ হিসেবে। বৃহস্পতিবার তাল আল-হাওয়া এলাকায় এক তাঁবুতে বিমান হামলায় একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হন, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে উদ্ধার হয় রক্তে ভেজা একটি শিশুদের গোলাপি স্যান্ডেল। প্রত্যক্ষদর্শী ইসরা আল-বাসুস জানান, তিনি সন্তানদের নিয়ে তাঁবুতে ঘুমাচ্ছিলেন, হঠাৎ বোমা পড়ে শরীরে টুকরো এসে লাগে, আর চার সন্তান আতঙ্কে চিৎকার শুরু করে।

গাজা সিটির জেইতুন, সাবরা, তুফাহ, নাসর ও শুজাইয়া এলাকায় ভয়াবহ বোমাবর্ষণ চালানো হয়েছে। সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, তুফাহ এলাকায় অন্তত আটজন প্রাণ হারিয়েছেন। শুজাইয়ায় এক আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় দুইজন নিহত হন এবং জেইতুন থেকে আল-ঘাফ পরিবারের তিন সদস্যের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, মানুষ বারবার নিরাপত্তার খোঁজে স্থান পরিবর্তন করছে, কিন্তু প্রতিবারই তারা নতুন করে হামলার মুখে পড়ছেন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিলেন শেখ রাদওয়ান এলাকায়, সেখানে ইসরায়েলি ট্যাংকের আক্রমণে ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে, এমনকি তাঁবুতেও আগুন ধরানো হয়েছে।

হাসপাতালগুলোতেও নেমেছে চরম বিপর্যয়। আল-শিফা হাসপাতালে মর্গের মেঝেতেই সারি সারি মরদেহ রাখা হচ্ছে। হাসপাতালের বাইরে শোকে ভেঙে পড়া এক মা মৃত সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন, ‘আমাকে ফেলে কোথায় গেলে, বাবা? কেন?’

ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার যোগাযোগ কর্মকর্তা টেস ইনগ্রাম সতর্ক করে বলেছেন, প্রায় ১০ লাখ মানুষ আটকা পড়েছেন এই ভয়ে, পালানো আর জানাজায় ভরা নগরীতে। কেবল বৃহস্পতিবারই গাজা সিটিতে ৪৪ জন নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি সেনাদের দাবি, তারা গাজা সিটির প্রায় ৪০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং অভিযান আরও জোরদার করা হবে। আল জাজিরার সানাদ ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সির স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, অন্তত ৫২টি ইসরায়েলি সামরিক যান জেইতুন এলাকায় মোতায়েন রয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, ২৫ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উত্তর ও মধ্য গাজা সিটি থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ গাজাতেও পরিস্থিতি ভিন্ন নয়। খান ইউনিসে আশ্রয় নেওয়া গর্ভবতী নারী শুরুক আবু ঈদ বলেন, ‘কোনও গোপনীয়তা নেই, শান্তিও নেই।’ নতুন করে উত্তর দিক থেকে মানুষের ঢল নামায় দুর্দশা আরও বেড়েছে।

উপত্যকার সর্বত্র মৃত্যু ও ধ্বংস নেমে এসেছে। নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলায় সাতজন নিহত হন, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু। রাফাহতে ত্রাণ সংগ্রহ করতে জড়ো হওয়া মানুষের ওপর গুলি চালালে আরও সাতজন প্রাণ হারান এবং অনেকে আহত হন।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের বিমান ও স্থল হামলায় একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৫ জন ফিলিস্তিনি।

এমজে

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত