ঢাকা, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২

সীমিত পরিসরে

অবশেষে ৫জি যুগে বাংলাদেশ: গ্রামীণফোন-রবির সেবা চালু

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০১ ২২:৪৩:১০

অবশেষে ৫জি যুগে বাংলাদেশ: গ্রামীণফোন-রবির সেবা চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে ৫জি যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল অপারেটর পরীক্ষামূলকভাবে এই অতি দ্রুতগতির প্রযুক্তি চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা অতি দ্রুতগতির ইন্টারনেট, লো-ল্যাটেন্সি, উন্নত সংযোগ এবং স্মার্ট পরিষেবা ও ডিজিটাল উদ্ভাবনের জন্য সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। পূর্ববর্তী প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তির তুলনায় ৫জি, অর্থাৎ পঞ্চম প্রজন্মের বৈশ্বিক ওয়্যারলেস প্রযুক্তি, একই সময়ে আরও বেশি ডিভাইস পরিচালনা করতে পারে। এটি ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT), স্মার্ট সিটি, স্বয়ংক্রিয় যানবাহন এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা অ্যাপ্লিকেশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রবিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা সর্বপ্রথম ৫জি সেবা চালু করে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটের সাতটি নির্বাচিত এলাকায় এই সেবা শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার ফকিরেরপুল (পল্টন) ও মগবাজার চৌরাস্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অংশ, চট্টগ্রামের খুলশী এবং সিলেটের সাগরদিঘীর পাড়। রবি তাৎক্ষণিকভাবে কতগুলো টাওয়ারের মাধ্যমে এই সেবা দিচ্ছে, তা জানায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম জানান, ২০২৫ সালের নভেম্বরের মধ্যে ২০০টি টাওয়ার সংযুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে তাদের।

এর দুই ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে দেশের বৃহত্তম টেলিকম অপারেটর গ্রামীণফোন (জিপি) ৫জি সেবা চালু করে। এক চমকপ্রদ ঘোষণায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান জিপির ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে দেশের সব বিভাগীয় শহরে ৫জি চালুর কথা জানান। যদিও জিপি সব বিভাগীয় শহরে কভারেজের দাবি করেছে, তবে ঢাকার কারওয়ান বাজারে অনেক ব্যবহারকারী ৫জি সংযোগ না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে কোম্পানি কর্মকর্তারা জানান, এই সেবা প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সীমাবদ্ধ এবং ধীরে ধীরে এর পরিসর বাড়ানো হবে।

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে গ্রামীণফোন ও রবির ২জি জিএসএম সেবা চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশের মোবাইল যাত্রা শুরু হয়, যা ভয়েস কল ও এসএমএসকে সহজলভ্য করে তোলে। এক দশকেরও বেশি সময় পর, ২০১৩ সালে ৩জি সেবা চালু হয়, যা দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও ভিডিও কলিং সুবিধা দেয়। এর পাঁচ বছর পর, ২০১৮ সালে ৪জি চালু হয়, যা মোবাইল ব্রডব্যান্ড, অ্যাপ-ভিত্তিক পরিষেবা, ই-কমার্স, রাইড-শেয়ারিং এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রসারে সহায়তা করে। অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং প্রস্তুতির অভাবে ৫জি চালুতে দীর্ঘ বিলম্ব হয়।

২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ৫জি ব্যান্ডউইথ আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) নীতিমালা ও স্পেকট্রামের মূল্য নির্ধারণের জন্য কমিটি গঠন করে। ২০২২ সালের মার্চে ১.২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ১৯০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম নিলাম করা হয় এবং অপারেটরদের ছয় মাসের মধ্যে ৫জি চালুর শর্ত দেওয়া হয়। কিন্তু ৫জি'র নীতিমালা চূড়ান্ত করতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিলম্ব হয় এবং সেখানে রোলআউটের সুস্পষ্ট কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। অপারেটররা উচ্চ খরচ, সীমিত চাহিদা এবং উপযুক্ত ইকোসিস্টেমের অভাবকে দেশব্যাপী ৫জি স্থাপনের বিলম্বের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, প্রথম ৫জি প্রদর্শনী হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই রবি ও হুয়াওয়ের উদ্যোগে। এরপর ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর টেলিটক ছয়টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি সেবা চালু করে। ২০২২ সালে গ্রামীণফোন ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং আটটি বিভাগীয় শহরে ট্রায়াল পরিচালনা করে।

বিশ্বব্যাপী ৫জি'র বিস্তার দ্রুতগতিতে চলছে। ভারত ২০২২ সালের ১ অক্টোবর বাণিজ্যিকভাবে ৫জি চালু করে এবং ২০২৫ সালের প্রথম দিকেই তাদের ২৫ কোটিরও বেশি সক্রিয় গ্রাহক এবং ৪ লাখ ৬৯ হাজার বেস স্টেশন ছিল। এরিকসন মোবিলিটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী ৫জি গ্রাহক সংখ্যা ২৪০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে এবং বছর শেষে তা ২৯০ কোটিতে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রবির লঞ্চিং অনুষ্ঠানে বিটিআরসি'র মো. এমদাদ উল বারী জোর দিয়ে বলেন যে ৫জি শুধু প্রযুক্তি নয়, এটি বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধান করার একটি মাধ্যম। তিনি ডিজিটাল বৈষম্য না বাড়ানোর জন্য রবিকে গ্রামীণ এলাকায়, বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং স্মার্ট ফার্মিংয়ে সেবা সম্প্রসারিত করার আহ্বান জানান। আইসিটি ও টেলিকম মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়জ আহমেদ তাইয়েব ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) এবং মেশিন-টু-মেশিন যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ৪জি নেটওয়ার্ক এখনো মানসম্মত নয় এবং এই নিম্নমানের সেবার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সরকার এবং অপারেটররা সম্মিলিতভাবে দায়ী।

এদিকে, জিপির ৫জি সেবা চালু প্রসঙ্গে সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, "বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই যুগান্তকারী প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে পেরে গ্রামীণফোন গর্বিত। ৫জি'র মাধ্যমে আমরা দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য নেটওয়ার্কের পাশাপাশি উদ্ভাবন, উদ্যোক্তা এবং স্মার্ট সমাধানের দুয়ার খুলে দিচ্ছি, যা জাতির ভবিষ্যৎকে নতুন রূপ দেবে।"

রবি আজিয়াটা পিএলসি'র ভারপ্রাপ্ত সিইও এম রিয়াজ রশিদ বলেন, "সরকারের দূরদর্শিতা ও নীতি সহায়তার কারণে আমরা রেকর্ড সময়ে ৫জি চালু করতে পেরেছি। এই রোলআউট বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতিকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রথমবারের মতো, আমাদের গ্রাহকরা সরাসরি দেখতে পারবেন সংযোগের ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে।"

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত