ঢাকা, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২

শেয়ারবাজার

আর্থিক খাতের ৮ কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের নির্ঘুম রাত

হাসান মাহমুদ ফারাবী
হাসান মাহমুদ ফারাবী

রিপোর্টার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০১ ২১:৩৪:২৪

আর্থিক খাতের ৮ কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের নির্ঘুম রাত

হাসান মাহমুদ ফারাবী: বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় ধরনের পদক্ষেপে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে শেয়ারবাজারে। দীর্ঘদিন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে অচল হয়ে পড়া ৯টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে ৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার তালিকাভুক্ত থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে।

বন্ধ হতে যাওয়া শেয়ারবাজারের প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি, প্রাইম ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস।

আর্থিক অনিয়ম ও ঋণ খেলাপির কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বাস্থ্য এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার সুযোগ কার্যত নেই। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। বিশ্লেষকদের মতে, দায় মেটানোর মতো সম্পদ হাতে না থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রায় নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বাজার বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিলুপ্তির প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীরা সবশেষে থাকেন। তাই সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের পুঁজি ফেরত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

বিলুপ্তির প্রক্রিয়ায় প্রথমে বাহ্যিক ঋণদাতাদের, এরপর আমানতকারী, ডিবেঞ্চার হোল্ডার এবং অগ্রাধিকারমূলক শেয়ারহোল্ডারদের পাওনা মেটানো হয়। সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা একেবারে শেষ সারিতে থাকায় তাদের জন্য কোনো আশাই অবশিষ্ট নেই।

আর্থিক খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যখন কোম্পানিগুলো আমানতকারীদের টাকাই ফেরত দিতে পারছে না, তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কীভাবে আশা করবেন তাদের মূলধন ফেরত পাবেন? তারা দায়ী পরিচালক ও স্পন্সরদের ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রি করে ক্ষতি পোষানোর দাবি জানান।

এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে শেয়ারবাজারে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দামে ধস নামে। গত সপ্তাহেই শেয়ারের দাম ১৯–৩৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে অনেক শেয়ারই অভিহিত মূল্য ১০ টাকার অনেক নিচে, এমনকি কোনো কোনোটি ২ টাকারও কমে নেমে এসেছে।

তবে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্তির বিষয়ে কিছু জানায়নি। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে আমরা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করব। তবে বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর অবশ্য আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, “তাদের অর্থ সুরক্ষিত থাকবে। স্পন্সর-পরিচালকদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।” তিনি জানান, বিলুপ্তির প্রক্রিয়া ফাইন্যান্স কোম্পানি অ্যাক্ট ২০২৩ অনুযায়ী হাইকোর্টের অনুমোদন নিয়ে পরিচালিত হবে।

আর্থিক খাতে এই সংকট হঠাৎ তৈরি হয়নি। বহু বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম চলছিল। এর বড় উদাহরণ হলো প্রশান্ত কুমার হালদারের জালিয়াতি, যিনি চারটি এনবিএফআই থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি পাচার করেছিলেন।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত