ঢাকা, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫, ১৮ কার্তিক ১৪৩২

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ: ৫৮ হাজার পদ এখনও শূন্য

২০২৫ আগস্ট ২০ ১৫:৫২:২৪

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ: ৫৮ হাজার পদ এখনও শূন্য

দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এ ধাপে ৪১ হাজার ৬২৭ জন প্রার্থীকে বিভিন্ন এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। তবে বিপুল এই নিয়োগের পরও প্রায় সাড়ে ৫৮ হাজার পদ শূন্যই থেকে যাচ্ছে, যা শিক্ষাখাতে চলমান শিক্ষক সংকট অব্যাহত থাকার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) এনটিআরসিএ'র চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফলাফল হস্তান্তর করেন।

এনটিআরসিএ'র তথ্য অনুযায়ী, এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মোট শূন্য পদের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪২টি। এর বিপরীতে অনলাইনে আবেদন জমা পড়েছিল মাত্র ৫৭ হাজার ৮৪০টি। অর্থাৎ, চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪২ হাজারেরও বেশি পদে কোনো আবেদনই জমা পড়েনি।

প্রাপ্ত আবেদনগুলো থেকে মেধাক্রম ও পছন্দক্রম অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে ৪১ হাজার ৬২৭ জন প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। তবে নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় ১২৫ জন প্রার্থীর আবেদন বাতিল করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এলাকার পদ, নির্দিষ্ট বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রার্থী না থাকা এবং কিছু পদের বেতন কাঠামো না হওয়ায় বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য রয়ে গেছে।

এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে এনটিআরসিএ। প্রার্থীদের মেধাক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূলত লিখিত পরীক্ষার নম্বরকে ভিত্তি ধরা হয়েছে। তবে একাধিক প্রার্থীর নম্বর সমান হলে বয়স, এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফল এবং সর্বোচ্চ ডিগ্রির ফলাফলকে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

১৬ জুন এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ২২ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হয়েছিল।

একসাথে ৪১ হাজারেরও বেশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশকে শিক্ষাখাতের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হলেও, প্রায় ৫৮ হাজার পদ খালি থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদরা। তাদের মতে, দেশের বহু প্রতিষ্ঠানে এখনও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষক নেই, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে পাঠদান কার্যক্রমে। এই বিশাল শূন্যপদ দ্রুত পূরণ করা না গেলে শিক্ষার মান ধরে রাখা কঠিন হবে এবং শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

উল্লেখ্য, এই নিয়োগের জন্য বিবেচিত প্রার্থীরা মূলত ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর প্রকাশিত এই নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে আবেদন করেছিলেন প্রায় ১৯ লাখ প্রার্থী। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে—প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে—চূড়ান্তভাবে ৬০ হাজার ৬৩৪ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন, যাদের মধ্য থেকেই এবারের নিয়োগ সুপারিশ করা হয়েছে।

সার্বিকভাবে, নতুন এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিছুটা স্বস্তি আনলেও, বিশাল সংখ্যক শূন্যপদ পূরণে দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করাই এখন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত