ঢাকা, রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২
রিটের আশ্রয়ে খেলাপির দায় এড়াচ্ছেন এক হাজারের বেশি ঋণগ্রহীতা

দেশের ব্যাংক খাতে এক হাজারের বেশি ঋণগ্রহীতা আদালতের রিটকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে খেলাপির দায় থেকে রেহাই পাচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে তারা খেলাপিযোগ্য হলেও আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশের কারণে নিয়মিত ঋণগ্রহীতা হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তি পরিশোধ না করেও বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তালিকায় তাদের নাম ওঠেনি। আদালতের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেক ঋণগ্রহীতা বছরের পর বছর খেলাপির তকমা এড়িয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে এক হাজার ৮৬ জন ঋণগ্রহীতা ২৭ হাজার ৩০২টি ঋণের বিপরীতে আদালতে রিট পিটিশন করেছেন। এসব রিটের কারণে অন্তত এক লাখ ৬৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ মামলায় ঝুলে আছে, যা ব্যাংকগুলোর জন্য বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে।
আগে ঋণখেলাপিরা সরাসরি হাইকোর্টে রিট করে নাম সিআইবিতে অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতেন। তবে ২০১৮ সালের শেষ দিকে আপিল বিভাগের এক আদেশে এ ধরনের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তারা থেমে থাকেননি। নতুন কৌশল হিসেবে এখন নিম্ন আদালতে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করেন। মামলা খারিজ হয়ে গেলে হাইকোর্টে আপিল করে সেখানে স্থগিতাদেশ আদায় করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের আদেশ সাময়িক স্থগিত করে দেন, পরে সেই স্থগিতাদেশ বছরের পর বছর বাড়তে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করার কোনো সুনির্দিষ্ট আইন নেই। এ সুযোগে অনেকেই ঋণের টাকা ফেরত না দিয়েও আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে নিয়মিত ঋণগ্রহীতা হিসেবে থাকছেন। এমনকি অন্য ব্যাংক থেকেও নতুন ঋণ নিচ্ছেন।
অন্যদিকে ব্যাংকগুলো অর্থঋণ আদালতে মামলা করলেও কাঙ্ক্ষিত সমাধান পাচ্ছে না। প্রজেক্ট প্রোফাইলের দুর্বলতা, বন্ধকি সম্পত্তির জটিলতা, অর্থঋণ আদালতের স্বল্পসংখ্যক বিচারক, এবং ব্যাংকের আইনজীবীদের যথেষ্ট সহায়তা না থাকায় মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে বিপুল অঙ্কের টাকা আটকে আছে, যা আর্থিক খাতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পৃথিবীর কোথাও এভাবে নির্বিচারে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় না। তার মতে, আধুনিক অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে বিচার বিভাগকেও আধুনিকায়ন করা জরুরি। দেশের লাখো মামলা ঝুলে থাকার মধ্যেই আদালত ব্যবস্থার ত্রুটি স্পষ্ট।
এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছর নির্দেশনা দিয়ে জানিয়েছে, ব্যাংকগুলোর আইন বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে। এজন্য প্রত্যেক ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের তত্ত্বাবধানে একজন চিফ লিগ্যাল অফিসার নিয়োগ দিতে হবে। তিনি মামলাধীন ঋণ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নীতি ও কৌশল প্রণয়ন করবেন। এ জন্য তার এলএলবি ডিগ্রিধারী হওয়া, অন্তত পাঁচ বছর লিগ্যাল টিমে কাজের অভিজ্ঞতা এবং সংশ্লিষ্ট মামলায় অন্তত ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
এছাড়া ব্যাংকের লিগ্যাল টিমে পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ জনবল নিতে হবে, যাদের মধ্যে অন্তত এক-তৃতীয়াংশের আইন বিষয়ে ডিগ্রি ও ব্যাংকিংয়ে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর ফলে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায়ে গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- হলে ঢাবি ছাত্রীর হঠাৎ অসুস্থতা, হাসপাতালে মৃত্যু
- মার্জিন ঋণে মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে বিনিয়োগ করা যাবে না
- ‘পদত্যাগ করতে পারেন ড. ইউনূস’
- শেয়ারবাজারের ৬ ব্যাংকের রেকর্ড মুনাফা, ৫ ব্যাংকের লোকসান
- বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে পাঁচ শেয়ার
- ঢাবির হলে 'গাঁ’জার আসর', চার শিক্ষার্থীকে আটক
- ১২ আগস্ট : শেয়ারবাজারের সেরা ৯ খবর
- মার্জিন ঋণ নিয়ে গুজব: ফের অস্থির শেয়ারবাজার
- ডিএসইর সতর্কবার্তার জালে দুর্বল দুই কোম্পানির শেয়ার
- দুই কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- বেক্সিমকো-বেক্সিমকো ফার্মাসহ চার ব্যক্তি-এক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা-সতর্ক
- সামিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কিনছে আরব আমিরাতের কোম্পানি
- বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের নতুন কমিটির অভিষেক শনিবার
- বিসিএসে স্বতন্ত্র বিভাগে অন্য বিভাগ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ