ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

বাংলাদেশে ‘পুশ ইনে’ বিপাকে ভারতীয়রাই

ডুয়া নিউজ- কলাম
২০২৫ জুলাই ২১ ১০:৪১:৪৮
বাংলাদেশে ‘পুশ ইনে’ বিপাকে ভারতীয়রাই

ভারতে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বাংলাদেশি ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে আরও অনেক আওয়ামী লীগপন্থী নেতা ৫ আগস্টের পর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যেসব ‘পুশ ব্যাক’ হচ্ছে সেসবের আওতায় এই শ্রেণির বাংলাদেশিরা নেই।

দরিদ্র ভারতীয়দের ‘বাংলাদেশি’ বানিয়ে শাস্তি:

এ যেন এক নির্মম পরিহাস! প্রকৃত বাংলাদেশিদের আশ্রয় দিয়ে ভারত নিজ দেশের হাজারো দরিদ্র নাগরিক বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষী হিন্দু-মুসলমানদের বাংলাদেশি বলে নির্যাতন করছে। এই জনগোষ্ঠীকে মোদি সরকারের ‘বাংলাদেশকে চাপে রাখা’র রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলো রাজনৈতিক সুবিধা নিতে এই পুশ ব্যাক প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করছে অবাঙালি ভোটারদের মন জয়ের হাতিয়ার হিসেবে। এর প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৭ জুলাই কলকাতায় এক মিছিল করেন। সেখানে তিনি বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালিদের হেনস্তার বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় কথা বলেন। তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর হামলা গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণের শামিল।

আসাম থেকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া : সোনা বানুর ঘটনা

বিবিসির একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আসামের বারপেটা জেলার বাসিন্দা ৫৮ বছর বয়সী সোনা বানুকে পুলিশ ২৫ মে হঠাৎ ডেকে পাঠিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যায় এবং ১৩ জনের সঙ্গে তাঁকে জোর করে বাংলাদেশের ভেতর ঠেলে দেয়। তিনি বলেন, জীবনে কখনো বাংলাদেশে যাননি, জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক। তাঁকে দুই দিন খাবার ও পানীয় ছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় জোর করে রাখা হয় এবং পরে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা তাঁকে ভারতে ফিরিয়ে দেন।

বিবিসির খবরে আরও অন্তত ছয়টি এমন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে যেখানে ভারতীয় নাগরিকদের ‘বিদেশি’ আখ্যায়িত করে সীমান্ত পার করে দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।

আল জাজিরার অনুসন্ধান: পুশ ব্যাকের বলি আলী:

আল জাজিরার প্রতিবেদনে এসেছে ৬৭ বছর বয়সী সাইকেল মেকানিক আলী ২৩ মে আসামের মরিগাঁও থেকে আটক হন এবং পরে তাকে সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিএসএফ জানিয়েছিল, যদি তারা ফিরে আসার চেষ্টা করেন তাহলে গুলি করা হবে। কিন্তু স্থানীয়দের প্রতিবাদ ও বিজিবির হস্তক্ষেপে আলী ফিরে আসতে পেরেছিলেন।

দ্য সেন্টিনেলের তথ্য মতে, ওই সময় ৬৫ জন ভারতীয় নাগরিককে ‘বাংলাদেশি’ পরিচয়ে সীমান্তে পাঠানো হয় যা বরাক উপত্যকায় বাঙালি-অধ্যুষিত এলাকায় ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

‘বাংলা মানেই বাংলাদেশি’—নতুন বাস্তবতা:

পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের দিল্লিতে কেবল বাংলায় কথা বলার অপরাধে আটক করে বিএসএফের হাতে তুলে দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর ঘটনা কলকাতা হাইকোর্টে ওঠে। আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় যে সব রাজ্যে একযোগে জুন মাসে বাংলাদেশি শনাক্তকরণ কেন? এর উদ্দেশ্য কী? ভাষাভিত্তিক হয়রানি কি সরকারি নীতি হয়ে উঠেছে?

শুভেন্দু অধিকারীর মতো বিজেপি নেতা এখন রোহিঙ্গাদের হুমকি তুলে নতুন আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছেন।

১৯৪৭-এর পর মাইগ্রেশন ও বিহারি প্রসঙ্গ:

দেশভাগের পর ভারত, পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে পারস্পরিক অভিবাসন ছিল স্বাভাবিক। বহু বিহারি ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে এবং অনেকেই আজও নাগরিকত্ব নেয়নি। তবুও কোনো বাংলাদেশি সরকার তাঁদের জোর করে ভারতে পাঠিয়ে দেয়নি যা মানবিকতার দৃষ্টান্ত।

ভারতকে রুখতে হবে ‘পুশ ব্যাক’ নীতি:

বাংলাদেশিদের ভারতে কাজের জন্য অবৈধভাবে যাওয়া এই প্রচারণা ভিত্তিহীন। আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের মাথাপিছু আয় (২৯৩৭ ডলার) বাংলাদেশের (২৭৭৪ ডলার) থেকে সামান্য বেশি যা প্রমাণ করে ভারতের দিকে কাজের জন্য ‘অবৈধ অভিবাসন’ তেমন যুক্তিসঙ্গত নয়।

ভারতের শহরগুলোয় পারিশ্রমিক বেশি হলেও জীবনযাত্রার খরচও অনেক বেশি। ফলে বাংলাদেশিদের ভারতে গমনের দাবি মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বরং এর আড়ালে যে ভয়ংকর সত্য লুকিয়ে আছে তা হলো নিজ দেশের দরিদ্র, নিঃস্ব, বাংলা ভাষাভাষী নাগরিকদের ‘বাংলাদেশি’ বানিয়ে সীমান্তে ফেলে আসা।

তথ্য: প্রথম আলো, লেখা: সালেহ উদ্দিন আহমদ, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত