ঢাকা, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
শিক্ষকতা পেশা নয়, হোক জ্ঞান বিতরণের উৎস

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড-কথাটি চিরন্তন সত্য। শিক্ষা ব্যতীত কোন জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।আর এই শিক্ষা প্রদান করে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক। শিক্ষকতা একটি মহান পেশা হিসেবে পরিচিত। তবে কোনোভাবেই এটিকে পেশা হিসেবে না ভেবে জ্ঞান বিতরণের উৎস হিসেবে ভাবা উচিত। এটাকে পেশা হিসেবে ভাবায় পেশাদারিত্ব বাড়ানোর জন্য শিক্ষালয়ে সময় দেয়ার প্রবণতা কমছে; কিন্তু রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। শিক্ষকদের মধ্যে যখন গবেষণা আর শিক্ষা মুখ্য বিষয় না হয়ে বাণিজ্যকরণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয় তখন শিক্ষক হয় দুর্বৃত্ত, শিক্ষা হয় ভূলুণ্ঠিত আর শিক্ষার্থী হয় নির্যাতিত। অবারিত শিক্ষার দ্বার সময়ের গণ্ডিতে রুদ্ধ হয়, শিক্ষার্থীতে পূর্ণ থাকে শিক্ষালয় আর শিক্ষালয় থাকে শিক্ষকশূন্য। বাণিজ্যকরণের পক্ষে চলে লাগামহীন যুক্তি আর শিক্ষার ঘটে অপমৃত্যু।
শিক্ষকতা পেশা আর দশটি পেশার মতো গতানুগতিক ও আর্কষনিয় নয় বরং কঠোর পরিশ্রম ও নৈতিকতা সম্পন্ন। যদি কোন শিক্ষক বাস্তবতা জেনে ভালোবেসে শিক্ষকতাকে বেছে নিয়ে থাকে তাহলে তার জানতে হবে আদর্শ, সততা, নৈতিকতার মধ্যে থেকে শিক্ষকতাই তার পরিচয় ও শিক্ষা দান করাই তার মূল দায়িত্ব আর কর্মরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই তার অস্তিত্ব। কেননা কর্মরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব টিকে থাকলেই তার পরিচয় টিকে থাকবে। তবে কোন শিক্ষক যদি ভালোবেসে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে না নিয়ে নিতান্তই জীবিকার প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে বা অর্থ উপার্জনের আশায় শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে থাকে তাহলে তিনি অবশ্যই এই মহান পেশাকে কলুষিত করবেন। কারন তিনি হয়তো বা এ পেশাকে গ্রহন করেছেন চাটুকারিতা ও স্বজনপ্রীতির মতো বিষাক্ত সিঁড়ি বেয়ে। যার দ্বারা শিক্ষা নয় বরং কুশিক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর যিনি ভালোবেসে এবং জ্ঞান বিতরণের উৎস হিসেবে এই পেশাটি বেছে নিয়েছেন তার দ্বারা মূলত এই দেশ ও জাতির কল্যাণ হবে।
শিক্ষক সমাজের একটি অংশ পথভ্রষ্ট হয়ে নিজ পেশার তাৎপর্য ও মহত্ব ভুলে গিয়ে কোচিং, টিউশনি, ক্লাসে না পড়ানো, প্রশ্নপত্র ফাঁস করাসহ নানা অপকর্মে যুক্ত হচ্ছেন। কেউ কেউ টাকার জন্য নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে ক্লাস টাইমে উপস্থিত না থেকে অন্য প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিতে কাজ করে। শিক্ষকতার মত মর্যাদাপূর্ণ একটি পেশায় টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া এবং অনৈতিক কাজ করা মোটেও শোভনীয় নয় বরং তা জাতির জন্য অশোভনীয় ইঙ্গিত। এই পথ থেকে যতদিন না শিক্ষকরা ফিরে আসবে ততদিন শুধু এটি পেশা হিসেবেই থাকবে তা আর মানব কল্যাণ ও জ্ঞান বিতরণের উৎস হবে না।
একজন প্রকৃত শিক্ষকই ধারাবাহিকভাবে একজন ছাত্রকে সহজ থেকে কঠিনের দিকে, জানা থেকে অজানার দিকে, জ্ঞানের বিন্দু থেকে নিয়ে যান জ্ঞানসমুদ্রের দিকে । প্রত্যেক শিক্ষকের উচিত শিক্ষার্থীর শিক্ষার প্রতি অনুরাগ জাগ্রত করা। শিক্ষার্থীদের অন্ধকার হতে আলোর পথে নিয়ে যাওয়া এবং বাস্তব ও সত্য অনুসন্ধানে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা। শিক্ষকের আরেকটি পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা। আর এই দায়িত্ব পালন করতে হলে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যথার্থ মূল্যায়নে ব্যর্থ হলে বা ভুল করলে ধ্বংস হয়ে যাবে একটি প্রজন্ম, একটি জাতি তথা একটি দেশ।
শিক্ষকতা নিঃসন্দেহে একটি মহান পেশা। একজন শিক্ষক সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা ও সম্মানের পাত্র। ভালো শিক্ষকের সংখ্যায় বেশি তবুও যারা বিপথে এই পেশাকে বেছে নিয়েছে তাদের উচিত জাতি ও দেশ গঠনের লক্ষ্যে সকল অবৈধ সুযোগ সুবিধা ভোগের উদ্দেশ্যে চাটুকারিতা, সমালোচনা, স্বজনপ্রীতি ও স্বার্থপরতা পরিহার করে একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়া। যার প্রধান লক্ষ্য হবে মানবতার কল্যাণ এবং জ্ঞান বিতরণ। তাহলেই এই মহান পেশার মর্যাদা রক্ষা এবং জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে।
একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা তখনই ভালো হবে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ তাদের শিক্ষার্থীদের সত্য জ্ঞান ও সুশিক্ষা দান করবেন। কেননা মানুষ গড়ার কারিগর একজন শিক্ষকই পারেন একটি সুশিক্ষিত ও উন্নত জাতি গড়ে তুলতে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হোক প্রিয় মাতৃভূম
আমজাদ হোসেন হৃদয়
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- শেয়ারবাজারের পাঁচ কোম্পানিতে বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ
- নভেম্বর-ডিসেম্বরে হতে পারে ঢাবির ৫৪তম সমাবর্তন
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তার জালে তিন কোম্পানি
- ঢাবি অ্যালামনাইয়ের বৃত্তির সাক্ষাৎকার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- ভারতের ২৫০ সেনা নিহত
- ১৭ কোম্পানি শেয়ারে সফল বিনিয়োগ, ২০ শতাংশের বেশি মুনাফা
- হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে, মারা গেলেন ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী
- চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে ভয়াবহ বিপদ, গবেষণায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য
- শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতে বিক্রেতা সংকটের নতুন দিগন্ত
- ঢাবির ২০১৮-১৯ সেশনের অছাত্ররা হতে পারবেন না ভোটার-প্রার্থী
- শিক্ষার্থীদের আলোকিত ভবিষ্যত গড়তে পাশে থাকবে ঢাবি অ্যালামনাই
- তাসনিম জারার হাফ প্যান্ট পরা ভাইরাল ছবি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য
- কারো বাবা শেষ সম্বল বিক্রি করেছেন, কারো বাবাই নেই
- শিক্ষার্থীদের জন্য সবসময় ডুয়ার অফিস খোলা : শামসুজ্জামান দুদু
- শোক সংবাদ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পলক