ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

সাড়ে ৮ কোটি রুপি দিয়েও ক্ষমা মিলছে না

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুলাই ১১ ২৩:০৪:৩৮
সাড়ে ৮ কোটি রুপি দিয়েও ক্ষমা মিলছে না

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। ইয়েমেনের অন্ধকার কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়া। শেষ মুহূর্তে তাকে বাঁচাতে চলছে মরিয়া চেষ্টা। ইসলামি শরিয়া আইন অনুযায়ী, ‘ব্লাড মানি’ বা রক্তের বিনিময়ে অর্থ দিয়ে ক্ষমা পাওয়ার একটি সুযোগ রয়েছে। সেই আশাতেই একটি সংগঠন প্রায় সাড়ে ৮ কোটি রুপি (এক মিলিয়ন ডলার) সংগ্রহ করেছে। কিন্তু নিহত ব্যক্তির পরিবার ক্ষমার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রিয়ার জীবন এখন সুতার ওপর ঝুলছে।

আগামী ১৬ জুলাই ইয়েমেনে ভারতীয় নাগরিক নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত তিন বছর ধরে ইয়েমেনের কারাগারে বন্দি প্রিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই তারিখের কথা জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার স্বামী টমি থমাস। এই খবর শোনার পর থেকে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

প্রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?

ভারতের কেরালা রাজ্যের পালাক্কাদ জেলার বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়া ২০০৮ সালে নার্স হিসেবে উন্নত জীবনের আশায় ইয়েমেনে পাড়ি জমান। কয়েক বছর হাসপাতালে কাজ করার পর তিনি স্থানীয় নাগরিক তালাল আবদো মেহদীর সঙ্গে অংশীদারিত্বে একটি ক্লিনিক খোলেন।

তবে ২০১৭ সালে তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। প্রিয়ার পরিবারের অভিযোগ, মেহদী তার পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে তাকে অবৈধভাবে আটকে রেখেছিলেন এবং তার ওপর নির্যাতন চালাতেন। নিজের পাসপোর্ট উদ্ধার করে দেশে ফেরার জন্য প্রিয়া মেহদীকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। কিন্তু ওষুধের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়ায় মেহদীর মৃত্যু হয়।

ইয়েমেন থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ২০১৭ সালে প্রিয়া গ্রেপ্তার হন এবং ২০১৮ সালে তাকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর থেকে ভারত সরকার, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং ‘সেভ নিমিশা প্রিয়া অ্যাকশন কাউন্সিল’ তাকে বাঁচানোর জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে।

ইসলামিক আইন অনুযায়ী, নিহতের পরিবার ক্ষতিপূরণ বা ‘দিয়াহ’ গ্রহণ করলে আসামিকে ক্ষমা করতে পারে। সেই অনুযায়ী, অ্যাকশন কাউন্সিল বিশ্বজুড়ে তহবিল সংগ্রহ করে এক মিলিয়ন ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৮ কোটি রুপি সংগ্রহ করেছে। কিন্তু এই অর্থের বিনিময়েও ক্ষমা মেলেনি। মেহদীর পরিবার ও তার গোত্র এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রিয়ার ফাঁসির আদেশ বহাল রয়েছে।

সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। ভারত সরকার কূটনৈতিক চ্যানেলে শেষ মুহূর্তের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে নিহত তালাল আবদো মেহদীর পরিবারের ওপর। তাদের একটি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-এর ওপরই এখন নির্ভর করছে নিমিশা প্রিয়ার জীবন-মরণ। পুরো ভারত এখন তাকিয়ে আছে ইয়েমেনের দিকে, একটি অলৌকিক খবরের আশায়।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত