ঢাকা, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, গভর্নর পাবেন মন্ত্রীর মর্যাদা

ডুয়া নিউজ- অর্থনীতি
২০২৫ জুলাই ০৭ ০৬:২৭:২৬
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, গভর্নর পাবেন মন্ত্রীর মর্যাদা

দেশের ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যকারিতা বাড়াতে সরকার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা।

নতুন বিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক কেবল জাতীয় সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। এ লক্ষ্যে 'বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ২০২৫' প্রণয়নের কাজ চলছে, যা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অধ্যাদেশ বা আইন আকারে জারি হতে পারে।

এই নতুন অধ্যাদেশের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, গভর্নর এবং ডেপুটি গভর্নরদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন আসবে। গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ ও অপসারণে জাতীয় সংসদের অনুমতি লাগবে। পর্ষদে আর্থিক খাত ও ব্যাংকিং বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া হবে এবং কোনো সরকারি আমলা রাখা যাবে না।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদমর্যাদা হবে মন্ত্রীদের সমান, যা বর্তমান ১৪ নম্বর ক্যাটেগরি থেকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ এবং সংসদের অনুমোদনক্রমে যোগ্য ব্যক্তিকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেবেন। একই প্রক্রিয়ায় ডেপুটি গভর্নররাও নিয়োগ পাবেন। অন্তত চারজন ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের কথা বলা হয়েছে, যারা প্রত্যেকে ছয় বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন এবং একবারের জন্য পুনর্নিয়োগ পেতে পারবেন। গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর উভয়েরই অর্থনীতি, ব্যাংকিং বা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

নতুন খসড়া অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকে আট সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে, যেখানে কোনো সরকারি কর্মকর্তা থাকবেন না। গভর্নর মনোনীত দু'জন ডেপুটি গভর্নর পর্ষদের সদস্য হবেন এবং বাকি পরিচালকদের জন্য গভর্নর একাধিক ব্যক্তির তালিকা সরকারের কাছে পেশ করবেন। এই পরিচালকদের অর্থনীতি, ব্যাংকিং, হিসাবরক্ষণ, অর্থ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং, বাণিজ্য, শিল্পঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অথবা আইনের মতো ক্ষেত্রে দক্ষতা এবং কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

পরিচালনা পর্ষদের মূল দায়িত্ব হবে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও তত্ত্বাবধান, আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং তদারকির মান প্রতিষ্ঠা করা। তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মী নিয়োগ, সুযোগ-সুবিধা এবং ব্যাংক তদারকিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। পর্ষদ প্রতিবছর কমপক্ষে ছয়বার সভা করবে।

খসড়া অনুযায়ী, গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর এবং পরিচালকদের অপসারণ সহজ হবে না। নিয়োগের শর্ত লঙ্ঘন, আস্থা ভঙ্গ বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বার্থ পরিপন্থি কাজ করলে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ এবং সংসদের অনুমোদন নিয়েই রাষ্ট্রপতি তাদের অপসারণ করতে পারবেন। তবে এর আগে অবশ্যই কারণ দর্শানোর নোটিশ ও শুনানির সুযোগ দিতে হবে।

এছাড়াও, মুদ্রা ও বিনিময় হারের নীতি সমন্বয়ের জন্য একটি 'সমন্বয় পরিষদ' গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। এই পরিষদ সামষ্টিক অর্থনৈতিক সমন্বয় বাড়ানো এবং রাজস্ব, মুদ্রা ও বিনিময় হার নীতির মধ্যে সমন্বয়ে কাজ করবে।

'বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ২০২৫'-এর অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংক 'ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫'-এর মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। এর আওতায় বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাংক রেজল্যুশনের জন্য একটি আলাদা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হবে, যা কোনো ব্যাংকের দুর্বলতা দেখা দিলে দ্রুত মূলধন ও প্রশাসনিক সংস্কারের মতো সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি এই যুগান্তকারী পদক্ষেপটি বাস্তবে রূপ দিতে পারে, তাহলে তা হবে এক বিরাট সাফল্য। এটি আর্থিক খাতের দীর্ঘদিনের অমানিশা কাটিয়ে নতুন এক আশার আলো জ্বালাবে এবং পুরো সেক্টরে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

বাঁচতে চায় ঢাবি শিক্ষার্থী মুন্নাছ

বাঁচতে চায় ঢাবি শিক্ষার্থী মুন্নাছ

দুরারোগ্য ব্যাধি লিউকেমিয়াতে আক্রান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রসায়ন বিভাগের ১০১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোঃ মুন্নাছ আলী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার সহযোগিতায়... বিস্তারিত