ঢাকা, সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২
পূর্ণাঙ্গ কমিশন ছাড়াই আট মাস: শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিশনার পদ আট মাস ধরে শূন্য থাকায় দেশের শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় নীতিনির্ধারণী কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এই দীর্ঘ শূন্যতা নজিরবিহীন, যা বাজারের স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সরকারের দাবি, পর্যাপ্ত যোগ্য লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বিশ্লেষকরা এটি কোন কারণ মনে করছেন না।
যিনি পদত্যাগ করেছেন, সেই ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান ছিলেন শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট অঙ্গনের একজন অভিজ্ঞ ও পরিচিত মুখ। ২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিনি পদত্যাগ করার পর থেকেই পদটি শূন্য রয়েছে। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিশন বর্তমানে চারজনের কাঁধে চলছে, যার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং অন্য কমিশনাররা হলেন মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখ। নিয়ম অনুযায়ী কমিশন সভার কোরাম গঠনে তিনজনের উপস্থিতি প্রয়োজন হলেও একজন সদস্যের অনুপস্থিতি পুরো কার্যক্রমে চাপ সৃষ্টি করছে। কোনো কমিশনার ছুটিতে গেলে বা হঠাৎ অনুপস্থিত থাকলে কমিশন সভা বসানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো ঝুলে যায় এবং বাজারের গতি ও জবাবদিহি প্রশ্নের মুখে পড়ে।
বিএসইসির মূল দায়িত্ব হলো নিয়মনীতি প্রণয়ন, শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তত্ত্বাবধান, নতুন আর্থিক পণ্য অনুমোদন এবং কারসাজি রোধের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করা। বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, কমিশনারদের দায়িত্বে কয়েকটি বিভাগ থাকে। একজন না থাকলে বাকি সদস্যদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। অনেক সময় লোকসংখ্যার ঘাটতির জন্য সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হয়। তিনি আরও বলেন, আইনে বলা আছে কমিশনারদের সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করতে হবে। একজন লোক না থাকলে এই ধারাবাহিকতা ভেঙে যায়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) কর্মকর্তারা বলছেন, কমিশনের নিয়োগটা যে জরুরি সেটা তারাও জানেন। তবে বাজার থেকে যথেষ্ট যোগ্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। যাঁদের খুঁজে পাওয়া যায়, তাঁরা আবার রাজি হন না।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, আসলেই কি যোগ্য লোকের অভাব, নাকি শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর চাপ ও বিবিধ স্বার্থের হিসাব-নিকাশে নিয়োগপ্রক্রিয়া থমকে আছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন এ বিষয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিএসইসি যেহেতু বাজারের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক, সেখানে প্রতিটি কমিশনারের অবস্থানই কার্যকর হতে হবে। একটা চেয়ার খালি থাকলে পুরো কাঠামোর ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, যার প্রভাব সরাসরি পড়ে বিনিয়োগকারীদের ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশনের পদ দীর্ঘদিন খালি থাকলে শেয়ারবাজারে সংস্কার, সুশাসন ও স্বচ্ছতা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।
যদি সরকার যোগ্যতা ও স্বার্থের ভারসাম্য খুঁজতে গিয়ে দায়িত্ব গ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীকেই খুঁজে না পায়, তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই কাঠামো কি কেবল আইনি কাঠামো হয়ে থাকবে, নাকি আসলেই সক্রিয়ভাবে কাজ করার মতো প্রতিষ্ঠান হবে? এমন অবস্থায় বাজারসংশ্লিষ্ট মহল দাবি—সরকারকে দ্রুত সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শূন্য পদে একজন অভিজ্ঞ, স্বাধীনচেতা ও দক্ষ কমিশনার নিয়োগ দিয়ে বাজারে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে, নিয়মনীতি ও নজরদারির অভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- হলে ঢাবি ছাত্রীর হঠাৎ অসুস্থতা, হাসপাতালে মৃত্যু
- মার্জিন ঋণে মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে বিনিয়োগ করা যাবে না
- ‘পদত্যাগ করতে পারেন ড. ইউনূস’
- শেয়ারবাজারের ৬ ব্যাংকের রেকর্ড মুনাফা, ৫ ব্যাংকের লোকসান
- বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে পাঁচ শেয়ার
- ঢাবির হলে 'গাঁ’জার আসর', চার শিক্ষার্থীকে আটক
- ১২ আগস্ট : শেয়ারবাজারের সেরা ৯ খবর
- মার্জিন ঋণ নিয়ে গুজব: ফের অস্থির শেয়ারবাজার
- দুই কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘লাল তালিকা’য় ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠান
- বেক্সিমকো-বেক্সিমকো ফার্মাসহ চার ব্যক্তি-এক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা-সতর্ক
- সামিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কিনছে আরব আমিরাতের কোম্পানি
- বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের নতুন কমিটির অভিষেক শনিবার
- বিসিএসে স্বতন্ত্র বিভাগে অন্য বিভাগ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ