ঢাকা, রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২

শিক্ষার্থীদের হামলায় চিকিৎসকসহ আ’হত ৩

ডুয়া নিউজ- বিশ্ববিদ্যালয়
২০২৫ আগস্ট ১৭ ১৮:১২:২৫
শিক্ষার্থীদের হামলায় চিকিৎসকসহ আ’হত ৩

স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হামলায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে এক চিকিৎসকসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও হাসপাতাল পরিচালক সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর জানান, বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালের স্টাফরা নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় ছিলেন। এরপর আজ রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। পরে বেলা ৩টার দিকে একজন চিকিৎসক, একজন স্টাফ ও একজন নারী আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যায়।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, আহতদের মধ্যে দুইজন আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। আর এর পর পরই হাসপাতালের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিনিধিরা আমার কাছে এসেছেন এবং কর্মস্থল নিরাপদ না হলে কর্মবিরতিতে যাওয়ার কথা বলেছেন। তবে আমি তাদের ধৈর্য ধরার জন্য বলেছি এবং রোগীদের সেবা চালিয়ে যেতে বলেছি। সোমবার সকাল ১০টায় সব বিভাগীয় প্রধানসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছি। সেখানে বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে।

হাসপাতালের স্টাফ ফয়সাল রাব্বি জানান, দুপুর ২টার কিছু আগে মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে বান্দরোড হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। শুরুতে তারা সেখানে বিক্ষোভ করলেও পরে গেট ভাঙার চেষ্টা করেন। পুলিশ ও হাসপাতালের আনসার সদস্যরা তা প্রতিহত করলে শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা স্টাফদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে বাহাদুর নামের এক স্টাফের মাথা ফেটে গুরুতর আহত হন এবং চিকিৎসক দিলীপ রায়কে মারধর করে গুরুতর জখম করা হয়।

তিনি ফয়সাল রাব্বি জানান, বিষয়টি হাসপাতালের পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে এবং এ নিয়ে আগামীকাল জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা চালু থাকবে।

হাসপাতালের মিডলেভেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সৈকত বলেন, একজন চিকিৎসকের মাথা ফাটানো হয়েছে, একজনের পায়ে মারধর করা হয়েছে, একজন স্টাফ গুরুতর আহত হয়েছেন। এভাবে কাজ করা সম্ভব নয়। এতদিন রোগীদের কথা ভেবে সহ্য করেছি। তবে এখন সমাধান না হওয়া পর্যন্ত জরুরি বিভাগ ও ভর্তি ছাড়া বাকি সব বিভাগে কর্মবিরতি পালন করা হবে।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে অনশনে থাকা অবস্থায় হাসপাতালের স্টাফরা তাদের ওপর হামলা চালান। তার প্রতিবাদে শনিবার সকালে অশ্বিনী কুমার হল প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে হাসপাতালের সামনে শেষ হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দালালমুক্ত হাসপাতাল দাবিতে স্লোগান দেন এবং হাসপাতাল পরিচালকের কাছ থেকে ন্যায্য বিচারের নিশ্চয়তা দাবি করেন। তাদের অভিযোগ, তখনই হাসপাতাল ভবনের সামনে থেকে মুখোশধারী শতাধিক ব্যক্তি গালিগালাজ ও উসকানিমূলক কার্যক্রম চালায় এবং হাতে দেশীয় অস্ত্রও দেখা যায়। পুলিশকে জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন বলেন, কিছু লোক পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করলেও আমরা তা নিয়ন্ত্রণে এনেছি। বর্তমানে হাসপাতাল এলাকা শান্ত রয়েছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত