ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

জুলাই অভ্যুত্থান: ইতিহাসের মোড় ঘোরানো  মাহেন্দ্রক্ষণ

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুলাই ০১ ০৯:২৯:৩৯
জুলাই অভ্যুত্থান: ইতিহাসের মোড় ঘোরানো  মাহেন্দ্রক্ষণ

গত বছরের জুলাই মাসে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন কীভাবে একটি ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়, তার বর্ষপূর্তি ঘিরে এখন স্মৃতিময় এবং রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ সময় পার করছে বাংলাদেশ।

২০২৪ সালের ৫ জুন, হাইকোর্ট এক রায়ে সরকারি চাকরির নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটাব্যবস্থা পুনর্বহাল করে ২০১৮ সালের বাতিল পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে। এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রায় বাতিলের দাবিতে গ্রন্থাগারের সামনে বিক্ষোভে নামে। ৬ জুন আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ঢাবির পাশাপাশি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও। আন্দোলনকারীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠেন এবং শাহবাগ থেকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে অচলাবস্থা সৃষ্টি করেন।

১৪ জুলাই শেখ হাসিনার বিতর্কিত মন্তব্য—“কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিদের না দিলে রাজাকারেরা পাবে?”—উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে। ওই রাতেই ঢাবিতে ছাত্রলীগের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়ান আন্দোলনকারীরা। পরদিন, ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। ওইদিন তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। নারী শিক্ষার্থীদের ওপরও বর্বর নির্যাতনের অভিযোগ উঠে।

১৬ জুলাই আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ড। নিরস্ত্র সাঈদকে পুলিশের গুলি করে হত্যা করা হয়—যার ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের ভাষায়, ‘ওইদিন আমরা সিদ্ধান্ত নিই, এটি কেবল কোটা ইস্যু নয়, বরং একটি রাষ্ট্র সংস্কারের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।’

পরবর্তী সময়ে সারা দেশে তীব্র প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তা বাহিনী, ছাত্রলীগ, যুবলীগের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, গ্রেপ্তার ও মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হতে থাকে। আগস্টের শুরুতে এক দফা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ডাকা হয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা রাজপথ দখলে নেয় এবং শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন বলে জানানো হয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থার (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, এই অভ্যুত্থানে সাড়ে ১৪শ’ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন।

২০২৫ সালের ১ জুলাই সেই ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি। মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো। ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ দেশজুড়ে ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস পালন, ৩ আগস্ট ইশতেহার পাঠ এবং ৫ আগস্ট ‘মুক্তি দিবস’ পালন করবে দলটি।

বিএনপি ৩০ জুন ছাত্রদলের উদ্যোগে আলোয় স্মৃতিচারণের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু করে। আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত তারা রক্তদান, পথনাটক, ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা, ফুটবল টুর্নামেন্টসহ ২২টি কর্মসূচি পালন করবে।

জামায়াতে ইসলামি শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল, শহীদ পরিবার ও আহতদের সঙ্গে মতবিনিময়, রংপুরে আবু সাঈদ স্মরণসভা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ দফা নিয়ে জাতীয় সমাবেশ করবে। ৫ আগস্ট দেশব্যাপী গণমিছিলেরও ডাক দিয়েছে তারা।

ছাত্রশিবির, আপ বাংলাদেশসহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠনও বর্ষপূর্তি ঘিরে মাসব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

ঢাবি দিবসে আজ যত আয়োজন

ঢাবি দিবসে আজ যত আয়োজন

'বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিপাদ্যে আজ ১ জুলাই ২০২৫ মঙ্গলবার ১০৫তম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করা হবে। এ... বিস্তারিত