ঢাকা, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

নির্বাচন কারচুপিতে জড়িত ৩ সিইসি-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মা'মলা

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুন ২২ ১৩:১৩:০১
নির্বাচন কারচুপিতে জড়িত ৩ সিইসি-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মা'মলা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বিগত তিনটি ‘বিতর্কিত’ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে।

রোববার (২২ জুন) দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এই আবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের কাছে জমা দেওয়া হয়। এরপরই শেরেবাংলা নগর থানায় বিএনপি ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও কিছু অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেয়। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ, যাদের মধ্যে মো. মিজানুর রহমান, মো. ইকবাল হোসেন, শরিফুল ইসলাম ও নাঈম হাসান উল্লেখযোগ্য।

সালাহ উদ্দিন খান অভিযোগ করেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় দায়িত্বরত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনের অন্য সদস্যরা বারবার অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেননি। তার দাবি, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের উচিত এসব অভিযোগের যথাযথ তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশন ভবন আগারগাঁও এলাকায় হওয়ায় শেরেবাংলা নগর থানাতেই মামলা দায়ের করা হয়েছে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। বিএনপি এই নির্বাচনের বৈধতা মানেনি এবং ‘বিনা ভোটের সংসদ’ বলে আখ্যা দেয়। সে সময়ের কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ। তাঁর সঙ্গে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ আবু হাফিজ, মোহাম্মদ আব্দুল মোবারক, মো. জাবেদ আলী ও মো. শাহনেওয়াজ।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেয়। তবে ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স পূরণসহ নানা ধরনের কারচুপির অভিযোগ ওঠে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়। এ নির্বাচন 'নিশিরাতের নির্বাচন' নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। এ সময় নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন কে এম নূরুল হুদা। কমিশনার ছিলেন রফিকুল ইসলাম, মাহবুব তালুকদার, কবিতা খানম ও শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।

সবশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ শরিক দল জাতীয় পার্টির জন্য আসন ছেড়ে দেয়। এতে নির্বাচনের প্রতিযোগিতা মূলত আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, ফলে ভোটারদের কাছে এটি ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি পায়। এ সময় কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল, যার সঙ্গে ছিলেন কমিশনার মো. আলমগীর, আনিছুর রহমান, রাশেদা সুলতানা ও আহসান হাবীব খান।

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে একটি ঐক্যমত্যভিত্তিক অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। গত ১৬ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিগত তিনটি ‘বিতর্কিত’ জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন ও পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। এই নির্দেশনা দেন বর্তমান সরকারপ্রধান ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত