ঢাকা, রবিবার, ১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
রিমান্ডে মুখ খুললেন সুব্রত বাইন, চাঞ্চল্যকর তথ্যে তোলপাড়
.jpg)
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এমন কিছু তথ্য দিয়েছেন যা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, তিনি ও তার সঙ্গীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের টার্গেট করে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল দেশে অস্থিরতা তৈরি করা। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা 'র'-এর কাছ থেকে কমান্ডো প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন সুব্রত।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও জানান, ‘র’-এর হয়ে তিনি নেপাল ও দুবাইয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশেও একাধিকবার তিনি ‘টার্গেট মিশন’ পরিচালনা করেছেন। এমনকি যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকে হত্যার মিশনের কথাও উঠে এসেছে তার স্বীকারোক্তিতে। অভিযোগ রয়েছে এই মিশনের পেছনে মদদ ছিল তৎকালীন সরকারের এক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর।
তদন্তকারীরা সুব্রতের কাছে একটি অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট ফোন থাকার তথ্য পেয়েছেন। যা ‘র’ সরবরাহ করেছিল বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে কথিত ‘আয়নাঘরে’ আটক অবস্থায় তাকে দূর থেকে টার্গেট নির্ধারণ করে আঘাত হানার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার দুপুরে কয়েক দফায় সুব্রত ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভারতের দুটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তার যোগাযোগ নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রথমে চুপ থাকলেও পরে ‘র’-এর হয়ে দায়িত্ব পালনের কথা স্বীকার করেন তিনি।
২০০১ সালে প্রকাশিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় থাকা সুব্রত তখন মোল্লা মাসুদকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে যশোরে এসে তিনি স্থানীয় লাল্টুর সহায়তায় বেজপাড়ায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বিউটি ও তিন সন্তান থাকতেন। যশোর থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে তিনি পুনরায় কলকাতায় চলে যেতেন।
কলকাতা পুলিশ এক পর্যায়ে তাকে গ্রেফতার করলে দার্জিলিংয়ে পড়াশোনা করা আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীরুল ইসলাম জয় সুব্রতকে ছাড়িয়ে আনেন। পরবর্তীতে এসকে চক্রবর্তী নামে এক পুলিশ কমিশনারের মাধ্যমে সুব্রত, জয় ও মোল্লা মাসুদের সঙ্গে ‘র’ এবং সেনা গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে ওঠে। তাদের ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কমান্ডো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুরোধে কলকাতায় অভিযান শুরু হলেও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় সুব্রত আলী মোহাম্মদ নামে একটি পাসপোর্ট তৈরি করে সিঙ্গাপুর ও পরে চীনে পাড়ি জমান। সেখানেও ‘র’-এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি। চীনে ‘র’-এর কার্যক্রম সীমিত থাকায় পরে তিনি দুবাই চলে যান এবং বিলাসবহুল ভিলায় থাকার সুযোগ পান। সেখানে তাকে টাইগার মেমন ও দাউদ ইব্রাহিমের মাফিয়া নেটওয়ার্কে ঢোকার চেষ্টা করতে বলা হয়। তবে তিনি সফল হননি।
পরবর্তীতে নেপাল হয়ে ভারতে ফেরত আসার সময় কলকাতায় তার বালিগঞ্জের বাড়ি থেকে এসটিএফ তাকে গ্রেফতার করে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় তাকে সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সুব্রতকে ঢাকায় এনে র্যাব সদর দপ্তরে রাখা হয় এবং সেখানে তার সঙ্গে দেখা করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। সেখানে তাকে জানানো হয় সফল মিশনের পর পরিবারসহ কানাডায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। তাকে দেওয়া হয় স্নাইপার প্রশিক্ষণ। যার মধ্যে ছিল মুভিং টার্গেট, বাতাসের গতি ও দূরত্ব বিবেচনায় নিয়ে গুলি করার কৌশল।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নতুন একটি মিশনের জন্য প্রস্তুত করা হয় সুব্রতকে। লন্ডনে অবস্থানরত একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকে টার্গেট করার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। তাকে পাকিস্তানি পাসপোর্টে লন্ডন পাঠানো ও কূটনৈতিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের পর সুব্রতকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং তিনি আবারও ‘র’-এর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন।
বর্তমানে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের মাধ্যমে নেপালে অবস্থানরত সন্ত্রাসী লেদার লিটনের সঙ্গে পলাতক আওয়ামী নেতাদের যোগাযোগের চেষ্টার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে জানাচ্ছে তদন্তসংশ্লিষ্টরা।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বাতিল হচ্ছে ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স, তালিকায় শেয়ারবাজারের ১৪টি
- ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ১.৪ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা
- শেয়ারবাজারের ৬৬ কোম্পানির প্রতি বিএসইসি’র কঠোর বার্তা
- গভীর রাতে ঢাবি শিবির সভাপতির ফেসবুক পোস্টে তোলপাড়
- বনানীতে ঢাবির সাবেক ছাত্রীর ম’রদেহ উদ্ধার
- শেয়ারবাজারের ১৮ ব্যাংককে ডিভিডেন্ড না দেওয়ার নির্দেশ
- ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি, তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব
- ঢাবির পীরগাছা উপজেলা সংগঠনের নেতৃত্বে রবিউল ও সৈকত
- ড. ইউনূসকে ‘আক্রমণ’!
- শেয়ারবাজার ধসের দায় চাপছে বিএসইসি নেতৃত্বের ওপর
- জেড ক্যাটাগরি ও ন্যুনতম শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানিতে বসছে স্বতন্ত্র পরিচালক
- ঈদের ছুটি নিয়ে নতুন প্রস্তাবনা
- ফাঁস হলো হাসনাত-সার্জিসকে হ-ত্যার ভ'য়ঙ্কর পরিকল্পনা
- মন্দার বাজারে আলো ছড়িয়েছে ২০ শেয়ার
- ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ডাকাতদের আড্ডা হয়ে গেছে’