ঢাকা, রবিবার, ১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপে ভারত, জাতিসংঘের তদন্ত শুরু
.jpg)
ডুয়া ডেস্ক: ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, সম্প্রতি তারা ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সাগরপথে জোরপূর্বক মিয়ানমারে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর মতো প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে খবর প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ দল ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
যেভাবে সাগরে ফেলা হয় রোহিঙ্গাদের: গত ৮ মে সন্ধ্যায় দিল্লির এক তরুণ রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমার থেকে একটি ফোনকল পান। ফোনের অন্যপাশে ছিলেন তার বাবা-মা। তরুণ বলেন, বাবা-মা আমাকে জানান, তাদের সমুদ্রের মাঝখানে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।
মাত্র দুই দিন আগেই ওই তরুণ দেখেছিলেন, পুলিশ তাদের বাড়ি থেকে তার বাবা-মাসহ আরও ৪১ জনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর ফোনে তার বাবা-মা তাকে এক নির্মম অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন। তারা জানান, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের একটি নৌবাহিনী জাহাজ থেকে আন্দামান সাগরে নামিয়ে দেয় এবং কেবল লাইফ জ্যাকেট পরে সাঁতরে মিয়ানমারের ভূখণ্ডে পৌঁছাতে বাধ্য করে।
ভুক্তভোগীদের নির্মম অভিজ্ঞতা: গত শুক্রবার পাঁচজন রোহিঙ্গা শরণার্থী বার্তা সংস্থা এপিকে নিশ্চিত করেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা সেই দলের মধ্যে ছিলেন, যাদের ৬ মে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আটক করেছিল। ওই দলে ১৫ জন খ্রিস্টানও ছিলেন। তাদের একটি বিমানযোগে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে ৮ মে ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের সাগরে ফেলে দেয়।
যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রোহিঙ্গারা: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পক্ষে আইনি লড়াই করা আইনজীবী দিলাওয়ার হুসেইন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে একটি আবেদন জমা দিয়েছে, যাতে তাদের ফেরত এনে আবার দিল্লিতে বসবাসের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ভারতের নৌবাহিনী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
জাতিসংঘ কী বলছে: জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তর গত ১৫ মে এক বিবৃতিতে জানায়, অন্তত ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নয়াদিল্লিতে আটক করা হয় এবং ভারত-মিয়ানমার জলসীমার কাছে ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের সাগরে ফেলে দেয়। শরণার্থীদের মধ্যে শিশু, নারী ও বৃদ্ধও ছিলেন। তারা সাঁতরে উপকূলে পৌঁছান। তবে তারা বর্তমানে মিয়ানমারে কোথায় রয়েছেন, তা জানা যায়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানায়, এই ঘটনাকে তারা ‘অবিবেচনাপ্রসূত, গ্রহণযোগ্য নয় এমন আচরণ’ হিসেবে অভিহিত করছে এবং তদন্তের জন্য একজন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটি ভারত সরকারকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি ‘অমানবিক ও জীবনহানিকর আচরণ’ বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক টম অ্যান্ড্রিউজ এই ঘটনাকে ‘আন্তর্জাতিক সুরক্ষার প্রয়োজন যাদের, তাদের জীবন ও নিরাপত্তার প্রতি প্রকাশ্য অবজ্ঞা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এটিকে ‘একটি ভয়াবহ ঘটনা’ হিসেবেও বর্ণনা করেন।
ভারতের অবস্থান: ভারতের কোনো জাতীয় শরণার্থী নীতিমালা বা আইন নেই। দেশটি ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রটোকলের পক্ষভুক্ত নয়। তবুও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ: গত সপ্তাহে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট আন্দামান সাগরে ৪০ জন রোহিঙ্গাকে ফেলে দেওয়ার ঘটনা সংক্রান্ত একটি আবেদনের শুনানি করতে অস্বীকৃতি জানান।
রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন ও সমুদ্রের ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের এমন অবস্থান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন আইন বিশেষজ্ঞ।
সোমবার সিভিল রাইটস সুরক্ষা সংস্থা আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, আজ সুপ্রিম কোর্ট সেই একই ভাষা ব্যবহার করছে, যা এই অমানবিক সরকার ব্যবহার করে শরণার্থীদের প্রতি।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বাতিল হচ্ছে ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স, তালিকায় শেয়ারবাজারের ১৪টি
- ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ১.৪ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা
- শেয়ারবাজারের ৬৬ কোম্পানির প্রতি বিএসইসি’র কঠোর বার্তা
- গভীর রাতে ঢাবি শিবির সভাপতির ফেসবুক পোস্টে তোলপাড়
- বনানীতে ঢাবির সাবেক ছাত্রীর ম’রদেহ উদ্ধার
- শেয়ারবাজারের ১৮ ব্যাংককে ডিভিডেন্ড না দেওয়ার নির্দেশ
- ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি, তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব
- ঢাবির পীরগাছা উপজেলা সংগঠনের নেতৃত্বে রবিউল ও সৈকত
- ড. ইউনূসকে ‘আক্রমণ’!
- শেয়ারবাজার ধসের দায় চাপছে বিএসইসি নেতৃত্বের ওপর
- জেড ক্যাটাগরি ও ন্যুনতম শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানিতে বসছে স্বতন্ত্র পরিচালক
- ঈদের ছুটি নিয়ে নতুন প্রস্তাবনা
- ফাঁস হলো হাসনাত-সার্জিসকে হ-ত্যার ভ'য়ঙ্কর পরিকল্পনা
- মন্দার বাজারে আলো ছড়িয়েছে ২০ শেয়ার
- ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ডাকাতদের আড্ডা হয়ে গেছে’