ঢাকা, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল রাজপথ

২০২৫ মে ০৯ ১৭:৩১:৩১
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল রাজপথ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবিতে দেশের বিভিন্ন ছাত্র ও নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, রাজনৈতিক দল এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো একজোট হয়ে রাজপথে সরব হয়েছে। তারা বলছেন, দলটি দীর্ঘদিন ধরে মানবতাবিরোধী অপরাধ, রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন ও সংগঠনগত সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত। এসব অপরাধের বিচার না হওয়া এবং মূল দলকে দায়মুক্তি দেওয়ার চেষ্টাকে তারা ইতিহাসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছেন।

আন্দোলনকারীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী করে নিষিদ্ধ করা হলেও, ছাত্রলীগের রাজনৈতিক অভিভাবক আওয়ামী লীগকেই বিচারের আওতায় না আনা প্রহসনের শামিল। ছাত্রলীগ শুধু একটি সহযোগী সংগঠন, যার জন্ম ও বিকাশ আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায়। তাই মূল দলকে দায়মুক্তি দিয়ে বিচার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে।

তাদের অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন, শাপলা চত্বরের গণহত্যা এবং বিডিআর বিদ্রোহে সেনাবাহিনীর ৫৭ কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডসহ একাধিক ঘটনায় আওয়ামী লীগ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল। এইসব রক্তাক্ত অধ্যায়ের এখনো বিচার হয়নি বরং অপরাধীদের রক্ষা করা হয়েছে। ফলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ গভীরতর হচ্ছে এবং সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি নতুন মাত্রা পেয়েছে।

রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর সহিংসতা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ও নির্যাতনের অভিযোগ বহুবার উঠেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, এসব কার্যকলাপ শুধু মানবতাবিরোধী অপরাধ নয় বরং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের উদাহরণ যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য মারাত্মক হুমকি।

এছাড়া জনগণের ভোটাধিকার হরণ, নির্বাচনী প্রহসন, দমন-পীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাটের মাধ্যমে দলটি দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল বলে অভিযোগ। এসব অপরাধের পরও আওয়ামী লীগের মধ্যে অনুশোচনার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। বরং তারা অপরাধীদের রক্ষায় সক্রিয় থেকেছে, যা জনআকাঙ্ক্ষার প্রতি চরম অবমাননা।

আওয়ামী লীগের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু না হওয়াকে আন্দোলনকারীরা সরকারের দুর্বলতা ও সদিচ্ছার অভাব হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্তরে দলটির প্রতি রাজনৈতিক পক্ষপাত এবং বিদেশি প্রভাবের কারণে বিচারপ্রক্রিয়া থমকে আছে। ফলে জনগণের আস্থা হারাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারও।

আন্দোলনকারীরা আন্তর্জাতিক নজির তুলে ধরে বলছেন, জার্মানির নাৎসি পার্টির মতো গণহত্যায় জড়িত রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার উদাহরণ বিশ্বজুড়ে রয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করার পূর্ণ আইনি ও নৈতিক ভিত্তি রয়েছে বলে তারা দাবি করেন।

শুধু ব্যক্তিরা নয়, দল হিসেবেই আওয়ামী লীগ সহিংসতা, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত ছিল, এমন প্রমাণ থাকায় সংগঠন নিষিদ্ধের জন্য আলাদা কোনো আইনি জটিলতা নেই বলেও মত দিয়েছেন অনেক বিশ্লেষক ও আইনজীবী।

আন্দোলনকারীদের মতে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের জনগণ রায় দিয়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। সে রায়কে সম্মান জানাতে হলে দলটিকে রাজনীতি থেকে চিরতরে নিষিদ্ধ করা জরুরি। অন্যথায়, শহীদদের আত্মত্যাগ এবং দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ব্যর্থ হয়ে যাবে।

মো: রাজিব আলী/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে