ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখিয়ে কোটি টাকার প্রতারণা, সপরিবারে উধাও ‘বিএসবির’ কর্ণধার

২০২৫ মে ০৬ ২৩:৪৩:৪৩
উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখিয়ে কোটি টাকার প্রতারণা, সপরিবারে উধাও ‘বিএসবির’ কর্ণধার

ডুয়া নিউজ: উচ্চশিক্ষার লোভ দেখিয়ে শত শত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রাজধানীর একটি শিক্ষা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান—‘বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক’। চটকদার বিজ্ঞাপন, আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তির দাবি এবং নানা আশ্বাস দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেছিল বিশ্বাসযোগ্যতার এক আবরণ। এ আড়ালের ফাঁক গলে দীর্ঘদিন ধরে চলছিল সুপরিকল্পিত প্রতারণা। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার খায়রুল বাশার বাহার বর্তমানে সপরিবারে পলাতক।

সিআইডির তথ্যমতে, বাশার ও তাঁর স্ত্রী খন্দকার সেলিমা রওশন এবং ছেলে আরশ ইবনে বাশারের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগে গত ৪ মে গুলশান থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।

মামলার প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪১ জন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। তবে সিআইডির কাছে আরও প্রায় ৭০০ ভুক্তভোগীর অভিযোগ জমা পড়েছে, যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের তদন্ত অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তির প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৬ লাখ থেকে শুরু করে ৩০ লাখ টাকারও বেশি অর্থ নিয়েছে। কেউ বিদেশ যেতে পারেননি, কেউ ভিসাও পাননি। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং কেউ টাকা ফেরত চাইলে হুমকির মুখে পড়েন।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাহমুদুল করিম ৯৪ লাখ, লিমা আক্তার ১৫ লাখ, তামান্না আক্তার ২২ লাখ, রাসেল আমান্ডা মণ্ডল ১৭ লাখ ২৭ হাজার, সাদমান সাইফ ১৬ লাখ ৪৬ হাজার এবং এম এ কাশেম ৩৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা প্রতিষ্ঠানটিকে দিয়েছেন বলে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন।

তদন্তে আরও উঠে এসেছে, বাশার ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে তা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন। প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। তবে বেশিরভাগ চেক ইস্যু করা হয় ব্যক্তিগত নামে, যাতে প্রাতিষ্ঠানিক দায় এড়ানো যায়।

বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ২০০৩ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় সেটি নবায়ন করে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার বাশার ‘বুশরা-সেলিমা-বাশার ফাউন্ডেশন’ নামের একটি অলাভজনক সংস্থারও সভাপতি।

মামলায় বাশার ও তাঁর পরিবারের পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও ৪–৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, আসামিরা দেশেই নেই। তাঁরা অন্য দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে গোপনে দেশ ছেড়েছেন।

এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবুল কালাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিএসবির কর্ণধারের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। বাকি ভুক্তভোগীদের অভিযোগ যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শিক্ষা এর সর্বশেষ খবর

শিক্ষা - এর সব খবর



রে