ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শব্দদূষণ ঠেকাতে প্রকাশিত হলো নতুন বিধিমালা ২০২৫

২০২৫ নভেম্বর ২৭ ১২:৩৯:৩৮

শব্দদূষণ ঠেকাতে প্রকাশিত হলো নতুন বিধিমালা ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান শব্দ দূষণ একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সংকটে রূপ নিয়েছে। নগরজীবন থেকে শুরু করে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় স্থানে অতিরিক্ত শব্দের চাপ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এমন বাস্তবতায় সোমবার (২৫ নভেম্বর) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬’ হালনাগাদ করে ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫’ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। নতুন বিধিমালা শব্দ নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রয়োজন ও প্রযুক্তিগত বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে।

পূর্বের বিধিমালায় আইন প্রয়োগে একাধিক সীমাবদ্ধতা থাকায় মাঠপর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ায় নানা বাধা সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারিতে সীমিত ক্ষমতা এবং স্পষ্ট দিকনির্দেশনার অভাবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়নি। এসব ঘাটতি পূরণ করতেই সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছে।

পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী শব্দদূষণবিরোধী ব্যবস্থায় কেবল ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা থাকলেও, অপ্রতুল জনবল ও জটিল প্রক্রিয়া তদারকিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নতুন বিধিমালায় প্রথমবারের মতো ম্যাজিস্ট্রেটদের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের (ট্রাফিক সার্জেন্টের নিচের পদ নয়) ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে বিধি ৬ এর উপ-বিধি (২), (৩) বা (৪) অনুযায়ী কেউ যদি অপরাধ করেন, তবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলেই জরিমানা আরোপ করতে পারবেন। এতে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে গতি আসবে বলে ধারণা কর্তৃপক্ষের।

হর্ন শব্দদূষণের অন্যতম বড় উৎস হলেও পূর্ববর্তী বিধিতে হর্ন আমদানি, উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রির ক্ষেত্রে শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় কঠোর তদারকি সম্ভব ছিল না। নতুন ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫’-এ এ বিষয়ে সুস্পষ্ট শাস্তির বিধান যুক্ত হয়েছে, যা অনিয়ন্ত্রিত হর্ন ব্যবহারে কঠোর নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে।

নতুন বিধিমালায় আরও যুক্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা—* লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনো পাবলিক প্লেসে লাউডস্পিকার, মাইক, অ্যাম্প্লিফায়ার ও সুরযন্ত্র সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ* প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলে বনভোজন নিষিদ্ধ* যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেল নির্ধারণ ও অনুষ্ঠান রাত ৯টার মধ্যে শেষ* নীরব এলাকায় পটকা, আতশবাজি, হর্নসহ যেকোনো উচ্চমাত্রার শব্দ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ* রাতের সময় নির্মাণকাজ বন্ধ* শিল্পকারখানা ও জেনারেটরের শব্দ নিয়ন্ত্রণে নতুন নির্দেশনা* সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী দণ্ড কার্যকরবিধিমালাটি প্রণয়নের আগে অংশীজনদের মতামত, বিভিন্ন দেশের বেস্ট প্র্যাকটিস, এবং জনগণের মতামত গ্রহণ করে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন বিধিমালা বাস্তবায়ন হলে শব্দদূষণ রোধে দেশে একটি কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হবে এবং স্বাস্থ্যকর ও বাসযোগ্য নগরায়ণে এটি একটি মাইলফলক হয়ে উঠবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত