ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের দাবি কেন বাস্তবসম্মত নয়

২০২৫ নভেম্বর ২৪ ১৭:৫২:৪৩

হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের দাবি কেন বাস্তবসম্মত নয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :বছরের পর বছর ওয়াশিংটন ও তেল আবিবে একই দাবি উচ্চারিত হচ্ছে— হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে, সংগঠনটি ভেঙে দিতে হবে এবং গাজা ছেড়ে যেতে হবে। টেকসই শান্তির জন্য এ দাবিকে বলা হচ্ছে অপরিবর্তনীয় শর্ত। কিন্তু ইতিহাস জানেন যাঁরা, তাঁদের কাছে এটি প্রায় অবাস্তব ও সরলীকৃত শোনায়।

মূল যুক্তি— “হামাস যদি অস্ত্র ফেলে, শান্তি ফিরে আসবেই।” কিন্তু এই ধারণা উপেক্ষা করে হামাসের আদর্শিক শিকড়, তাদের সশস্ত্র সংগ্রামের প্রেক্ষাপট এবং ইতিহাসের কঠিন বাস্তবতা। আধুনিক ইতিহাসে কোনো সশস্ত্র আন্দোলন কেবল প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে অস্ত্র ছেড়ে দেয়নি। ইসরায়েলের সামনে আজ যে বড় নিরাপত্তা সংকট দাঁড়িয়েছে, তার অন্যতম কারণ—হামাস সেই শর্তে রাজি হয়নি যেখানে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র, সার্বভৌমত্ব বা নিরাপত্তার নির্ভরযোগ্য নিশ্চয়তা নেই।

ইতিহাসে এই ভুলের নির্মম উদাহরণ ১৪৯২ সালের গ্রানাডার পতন। দীর্ঘ অবরোধের পর মুসলিম শাসকরা ক্যাথলিক রাজদম্পতির কাছে আত্মসমর্পণ করে। ৮০ পৃষ্ঠার গ্রানাডা চুক্তিতে মুসলমানদের ধর্ম, জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল—কিন্তু দুই বছরের মধ্যেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়। এই ঘটনা দেখায়—অসাম্য ক্ষমতার সম্পর্কের মধ্যে দেওয়া প্রতিশ্রুতি কতটা ক্ষণস্থায়ী হতে পারে।

হামাসের দৃষ্টিতে তাই নিরস্ত্রীকরণ শান্তির পথ নয়; বরং অস্ত্র সমর্পণ মানে ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণভাবে প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া। প্রতিশ্রুতি ভেঙে গেলে তখন আর ফিরে যাওয়ার পথ থাকবে না।

ইতিহাসে আরও অনুরূপ উদাহরণ আছে। ভিয়েত কং অস্ত্র সমর্পণের শর্তে রাজনৈতিক স্বীকৃতি পেতে পারত, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। অস্ত্র আঁকড়ে ধরে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল সামরিক শক্তিকে প্রতিহত করে এবং শেষ পর্যন্ত মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম বড় যুদ্ধপরাজয়ের কারণ হয়। হ্যানয় বুঝেছিল— অসম যুদ্ধে অস্ত্র কখনো আলোচনার বিষয় নয়; এটি বেঁচে থাকার উপায়।

আইআরএ ছিল বিরল ব্যতিক্রম। অস্থায়ী আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি অস্ত্র জমা দিয়েছিল, কিন্তু তা ছিল আস্থার কারণে নয়—বরং তাদের রাজনৈতিক শাখা সিন ফেইন সরকারে বাস্তব ও নিশ্চিত অংশীদারিত্ব পাওয়ার পর। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও বন্দিদের মুক্তির নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই তারা নিরস্ত্রীকরণে রাজি হয়।

ইতিহাস বলে—নিরস্ত্রীকরণ তখনই ঘটে যখন দুর্বল পক্ষ বাস্তব ও নিশ্চিত রাজনৈতিক সুবিধা পায়। কেবল প্রতিশ্রুতি বা বিশ্বাসের ওপর ভর করে কোনো সশস্ত্র আন্দোলন অস্ত্র ফেলে না; হামাসও তার ব্যতিক্রম নয়।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত