ঢাকা, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণা আজ

২০২৫ নভেম্বর ১৭ ০৯:৪৭:১৮

শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণা আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আজ ঘোষণা করা হবে। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করবেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ট্রাইব্যুনাল-১–এর এজলাস থেকে রায় ঘোষণার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা এটিই প্রথম মামলা, যার রায় আজ ঘোষণা করা হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) এই মামলার রায়ের দিন ঠিক করেন আদালত।

গত ২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামানের সমাপনী বক্তব্য শেষে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন।

এই মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। তাদের মধ্যে মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা অঙ্গীকার করেছিলেন যে, যত শক্তিশালীই হোক না কেন, বাংলাদেশে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করবে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আদালত ১৭ নভেম্বর তার সুবিবেচনা ও প্রজ্ঞা প্রয়োগ করে জাতির বিচারের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সুবিচার করবেন এবং একটি সঠিক রায় দেবেন, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। প্রসিকিউশন আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছে।

অন্যদিকে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন আশা প্রকাশ করেছেন যে ট্রাইব্যুনাল তার মক্কেলদের খালাস দেবেন। তিনি বলেন, মামলা পরিচালনায় কোনো অস্বস্তি বা বাধা ছিল না এবং তিনি প্রাপ্ত দলিল-দস্তাবেজের আলোকেই কাজ করেছেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয়। গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শুরু হয় এবং সেদিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

চলতি বছরের ১৬ মার্চ সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে এই মামলায় আসামি করার আবেদন করা হয় এবং ট্রাইব্যুনাল তাতে সম্মতি দেন। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চলতি বছরের ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় এবং প্রসিকিউশন শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে।

পাঁচটি অভিযোগ:

শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো:

১. গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূলক বক্তব্য’।

২. হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ।

৩. রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা।

৪. রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা।

৫. আশুলিয়ায় ছয়জনকে পোড়ানো।

এই পাঁচ অভিযোগে গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে তাদের বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। আসাদুজ্জামান খান কামালও ভারতে আছেন বলে ধারণা করা হয়। তাদের পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচারকাজ চলে। কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি সাবেক আইজিপি মামুন ১০ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন এবং আদালত তাকে অ্যাপ্রুভার হিসেবে রাজসাক্ষী হওয়ার অনুমোদন দেন।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গত ১২ অক্টোবর এই মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু হয়। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড চান। অন্যদিকে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন দুই আসামির খালাসের আর্জি জানান। রাজসাক্ষী মামুনের পক্ষেও খালাসের আবেদন করেন তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

যুক্তিতর্ক শেষ হয় ২৩ অক্টোবর। অ্যাটর্নি জেনারেল সেদিন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে ইঙ্গিত করে বলেন যে, যদি এই আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে অনেকেই প্রতিবাদ করবেন। কিন্তু তিনি আশা করেন, আসামিরা এই বিচারের রায় মেনে নেবেন এবং আদালত সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করবেন।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত