বিদেশে কম খরচে পড়াশোনার সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : উচ্চমাধ্যমিক শেষে অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে ভালো ক্যারিয়ার গড়ার। সেই লক্ষ্যেই অনেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে চান। তবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী জানেন না, কীভাবে বিদেশে পড়াশোনার প্রস্তুতি নিতে হয় বা কোন দেশে খরচ তুলনামূলকভাবে কম। ফলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন না।

বর্তমানে নরওয়ে, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলো শিক্ষার মান এবং সুযোগের কারণে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এসব দেশের পাশাপাশি এশিয়া ও ইউরোপের আরও কিছু দেশ আছে, যেখানে টিউশন ফি ছাড়াই বা খুব কম খরচে পড়াশোনার সুযোগ মেলে। নিচে এমন কয়েকটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও খরচের সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়া হলো।

জার্মানি

ইউরোপে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোর একটি জার্মানি। দেশটির অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো টিউশন ফি নেই, শুধু প্রশাসনিক ফি দিতে হয়। কিছু প্রদেশে নন-ইইউ শিক্ষার্থীদের জন্য অল্প ফি চালু হয়েছে। সাধারণত সেমিস্টারপ্রতি খরচ ৩১৫ থেকে ৫৩০ ডলার এবং মাসিক জীবনযাত্রার ব্যয় প্রায় ৯৫০ ডলার। স্নাতক শেষে ১৮ মাসের পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক ভিসাও পাওয়া যায়।

চেক প্রজাতন্ত্র

ইউরোপের সমৃদ্ধ দেশ চেক প্রজাতন্ত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি ছাড়াই পড়ার সুযোগ আছে। তবে চেক ভাষা জানা বাধ্যতামূলক। ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে চাইলে টিউশন ফি দিতে হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভিন্ন।

নরওয়ে

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ নরওয়ে আগে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি মুক্ত ছিল। তবে ২০২৩ সাল থেকে নন-ইইউ দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি চালু হয়েছে। বছরে গড়ে ১১ থেকে ১৩ হাজার ডলার খরচ হতে পারে। মাসিক জীবনযাত্রার ব্যয় ৭৩৫ থেকে ৯৫০ ডলার। ছোট শহরে খরচ তুলনামূলক কম, প্রায় ৮০০ থেকে ১ হাজার ইউরো।

সুইডেন

ইউরোপীয় ইউনিয়নের শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্টার্স পর্যায়ে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে বাংলাদেশসহ নন-ইইউ দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের বছরে গড়ে ৯ হাজার থেকে ১৫ হাজার ইউরো দিতে হয়। পিএইচডি পর্যায়ে অবশ্য পড়াশোনা বিনা ফিতে করা যায়।

ফ্রান্স

ফ্রান্স বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত। এখানকার লাইসেন্স (স্নাতক) পর্যায়ে বছরে ২ হাজার ৭৭০ ইউরো এবং মাস্টার্স পর্যায়ে ৩ হাজার ৭৭০ ইউরো খরচ হয়। জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলকভাবে কমাতে চাইলে ছোট শহরগুলোতে মাসে ৬৫০ ইউরোতেই থাকা সম্ভব।

অস্ট্রিয়া

ইইউ দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রিয়ার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিনা ফিতে শিক্ষা দেয়। নন-ইইউ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি সেমিস্টারে গড়ে ৭২৬ ইউরো দিতে হয়। তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে ফি আংশিক বা সম্পূর্ণ মওকুফ করা হয়। মাসিক খরচ ৯০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ ইউরো।

তাইওয়ান

তাইওয়ানে প্রযুক্তি, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ আছে। এখানে প্রতি বছর ৬৭৫ থেকে ১২ হাজার ৭০০ ইউরো খরচ হয়। মাসিক জীবনযাত্রার খরচ ৬৮০ থেকে ৮৮০ ইউরো।

তুরস্ক

ইউরোপীয় উচ্চশিক্ষা অঞ্চলের অংশ তুরস্কে পড়াশোনা তুলনামূলক সাশ্রয়ী। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে ১০০ থেকে ৪ হাজার ইউরো খরচ হয়। মাসে ৪০০ থেকে ৬৫০ ইউরো ব্যয়ে ভালোভাবে থাকা সম্ভব।

আর্জেন্টিনা

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা বিনা ফিতে করা যায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার ডলার। মাসিক জীবনযাত্রার খরচ প্রায় ৩৫০ ডলার। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন বৃত্তির সুযোগও আছে।

পোল্যান্ড

পোল্যান্ডে ৪০০-র বেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এখানে ভর্তি পরীক্ষার ঝামেলা নেই। টিউশন ফি বছরে গড়ে ২ হাজার ৩৬৮ ইউরো এবং মাসিক খরচ ৩৫০ থেকে ৫৫০ ইউরো। জীবনযাত্রার মান ও নিরাপত্তার দিক থেকেও দেশটি জনপ্রিয়।

মালয়েশিয়া

এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় শিক্ষাগন্তব্য মালয়েশিয়া। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর পর্যায়ে বছরে ২ থেকে সাড়ে ৪ হাজার ইউরো এবং মাস্টার্স পর্যায়ে ৫০০ থেকে ৪ হাজার ইউরো খরচ হয়। মাসিক জীবনযাত্রার খরচ ৪৫০ থেকে ৮০০ ইউরো।

সারসংক্ষেপে, বিদেশে উচ্চশিক্ষা এখন আর কেবল ধনীদের বিষয় নয়। সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনা থাকলে কম খরচে উন্নত শিক্ষার সুযোগ পাওয়া সম্ভব।

ডুয়া/নয়ন