ঢাকা, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২

নিউইয়র্কে জোহরানের বিজয়ের নেপথ্যে বাংলাদেশি জারা রহিম      

২০২৫ নভেম্বর ১২ ১৭:০৭:৪০








নিউইয়র্কে জোহরানের বিজয়ের নেপথ্যে বাংলাদেশি জারা রহিম




 
 



 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা ঘটিয়েছেন দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারিতে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে জয়ী হওয়া জোহরান ৪ নভেম্বরের নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচিত হন।

যদিও তার বিজয় সবার চোখে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কৌশল ও তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার পদ্ধতির কারণে, তবে এর পেছনে ছিলেন তার প্রধান উপদেষ্টা জারা রহিম। বাংলাদেশের অভিবাসী পরিবারের সন্তান জারা রহিম জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে ডিজিটাল কৌশল প্রয়োগ করে কাজ করছেন।

জারা রহিম ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জোহরানের প্রচারদলের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নির্বাচনী কৌশল হিসেবে জানিয়েছেন, ‘রাজনৈতিক কৌশলবিদদের বানানো কল্পিত নিউইয়র্ককে ভুলে প্রকৃত শহরকে কেন্দ্র করে প্রচার চালানো’।

এই ধারণা বাস্তবায়ন করে ৯০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক শহরের এমন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছেন, যাদের সাধারণত রাজনীতি উপেক্ষা করে এসেছে।

ফ্লোরিডার সাউথ অঞ্চলে বড় হওয়া জারা সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিউনিকেশনস বিষয়ে পড়াশোনা করেন। কলেজজীবন থেকেই তিনি রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে একত্রিত করার দক্ষতা অর্জন করেন এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে গল্প বলার ক্ষমতা অনুশীলন করেন।

২০১২ সালে বারাক ওবামার নির্বাচনী প্রচারে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ শুরু করে জারা দ্রুত ফ্লোরিডার ডিজিটাল কনটেন্ট ডিরেক্টর হন। হোয়াইট হাউসের অফিস অব ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজিতে কাজের পর তিনি উবার ও হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

জোহরানের নির্বাচনী প্রচারে জারার মূল কৌশল ছিল সরাসরি সংযোগ স্থাপন। বিশেষ করে যেসব জনগোষ্ঠী প্রথাগত রাজনীতিতে উপেক্ষিত, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সরাসরি মাঠের কাজের সঙ্গে সংযুক্ত করে প্রচার কার্যকর করা হয়। নির্বাচনী সময় জোহরান বিভিন্ন ভাষায় শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতেন, যার ফলে ভোটারদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে।

৪ নভেম্বর নির্বাচনের চূড়ান্ত লড়াইয়ে স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা বেড়ে ৯০ হাজারের বেশি হয়। প্রচারে ঐতিহ্যবাহী সাংগঠনিক পদ্ধতি ও আধুনিক ডিজিটাল কৌশলের সমন্বয় ঘটানো হয়। জোহরানের ভিডিওগুলো অনলাইনে কোটি কোটি বার দেখা হলেও প্রচার দল নিশ্চিত করে, এটি শুধু ভোট চাওয়ার প্রচার নয়, বরং ‘যোগাযোগের সংস্কৃতি’ গড়ে তোলা।

জারা রহিমের নেতৃত্বে নবনির্বাচিত মেয়র একটি নারী নেতৃত্বাধীন ট্রানজিশন টিম গঠন করেছেন। এতে রয়েছেন সাবেক ফেডারেল ট্রেড কমিশন প্রধান লিনা খান, সাবেক উপ-মেয়র মারিয়া তোরেস-স্প্রিংগার, ইউনাইটেড ওয়ের সভাপতি গ্রেস বনিলা এবং সাবেক উপ-মেয়র মেলানি হার্টজগ। এই দল আগামী ১ জানুয়ারি জোহরানকে দায়িত্ব নেওয়ার আগে প্রস্তুতি ও সহায়তা দেবে। জারার কাজ প্রমাণ করে, আধুনিক রাজনীতিতে যোগাযোগ শুধু বার্তা ছড়ানোর বিষয় নয়, বরং মানুষের মন ও অভিজ্ঞতা বোঝার বিষয়।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত