ঢাকা, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫, ১৮ কার্তিক ১৪৩২

দুদকের মামলার আসামীদের ফারইস্ট লাইফ থেকে অপসারণের সুপারিশ

২০২৫ নভেম্বর ০২ ২০:৩৬:৪৫

দুদকের মামলার আসামীদের ফারইস্ট লাইফ থেকে অপসারণের সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিভিন্ন সময়ে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এ ঘটনার কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এরই মধ্যে চারটি মামলা দায়ের করেছে। তবে অবাক করার বিষয়, এসব মামলার আসামি ও তাদের আত্মীয়-স্বজনই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে থেকে সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন।

সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা গোপন প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা এবং আত্মসাৎ করা অর্থ উদ্ধারে দুদকের দায়ের করা মামলার আসামি, অর্থ আত্মসাতকারী ও তাদের আত্মীয়দের পরিচালনা পর্ষদ থেকে অপসারণ করে স্বচ্ছ বোর্ড গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।

এই প্রতিবেদন সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা পড়েছে। প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইডিআরএ-এর নিয়োগ করা নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান সিরাজ খান বসাক এন্ড কোং এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর তদন্তে অর্থ আত্মসাতের তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। দফায় দফায় পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তনের পরও আসামি ও তাদের আত্মীয়রা বোর্ডে থেকে কোম্পানির আর্থিক সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করছেন। এতে অর্থ উদ্ধারে কোনো অগ্রগতি হয়নি এবং গ্রাহকরা চরম হয়রানিতে রয়েছেন।

প্রতিবেদন আরও উল্লেখ করেছে, অবৈধভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে কোম্পানির ৩৬, তোপখানা রোডস্থ ৩৩.৫৬ শতাংশ জমি এবং তদস্থিত বিল্ডিং প্রায় ২০৭ কোটি টাকায় ক্রয়-বিক্রয় করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

কিছু উল্লেখযোগ্য পরিচালকদের বিষয়ও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে:

• মো. মোবারক হোসেন: সাবেক পরিচালক আলহাজ মো. হেলাল মিয়ার ভাই। তিনি বর্তমান বোর্ডে নিরপেক্ষ পরিচালক হলেও প্র্যাক্সি হিসেবে হেলাল মিয়াদের অনিয়ম বৈধ করতে প্রভাব বিস্তার করছেন।

• নাজনীন হোসেন: দুদকের মামলার ৪নং আসামি। বর্তমানে বোর্ডের পরিচালক ও অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত জমি ক্রয়ের কমিটির চেয়ারম্যান। স্বামীও বোর্ডে থাকায় কর্পোরেট গভর্ন্যান্স লঙ্ঘন করেছেন।

• ড. মোকাদ্দেস হোসেন: বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান। মামলার আসামি তার দুই বড় ভাই। স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও তিনি বোর্ডে রয়েছেন।

• শেখ মোহাম্মদ শোয়েব নাজির: নিরপেক্ষ পরিচালক হলেও মামলার আসামি ও তাদের আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে গভর্ন্যান্স লঙ্ঘন করছেন।

প্রতিবেদন সতর্ক করেছে, পরিচালকদের দুর্নীতির কারণে কোম্পানির আর্থিক ভিত দুর্বল এবং গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে। এই চক্রের সব সদস্যকে আইনের আওতায় আনা না হলে অন্য কোম্পানিগুলোও এ ধরনের অনৈতিক কাজে উৎসাহিত হতে পারে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত