ঢাকা, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২

“আমার লোক, তোমার লোক’ ব্যাধি থেকে ছোট দলও মুক্ত নয়”

২০২৫ নভেম্বর ০১ ১৬:২১:২৭

“আমার লোক, তোমার লোক’ ব্যাধি থেকে ছোট দলও মুক্ত নয়”

নিজস্ব প্রতিবেদক: আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘আমার লোক, তোমার লোক’ সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো, যেমন বিএনপি ও জামায়াত, বের হয়ে আসা উচিত। তিনি জানিয়েছেন, ছোট ও উদীয়মান দলগুলোও এই ব্যাধি থেকে মুক্ত নয়।

শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ‘প্রথম আলো’র কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে ড. আসিফ নজরুল এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি দুই পুলিশ কর্মকর্তার বদলির ঘটনায় বড় দুই দল থেকে টেলিফোনে কল পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এটি রাজনৈতিক প্রভাবের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার লোক, তোমার লোক ডেফিনেটলি এটি আওয়ামী লীগ আমলে ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছিল। ৭৩ সালের আওয়ামী লীগের আমলে শুরু হওয়া খারাপ কর্মকাণ্ড, যেমন গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে নির্যাতন সবই আওয়ামী লীগ থেকে শুরু হয়েছে, বাকিরা কন্টিনিউ করেছে।”

ড. আসিফ নজরুল বলেন, এই সংস্কৃতি নাগরিক সমাজেও রয়ে গেছে। তিনি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ আমলে সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ আক্তান্ত হওয়ার পর কোনো প্রতিবাদ হয়নি। তিনি মন্তব্য করেন, “তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে নির্মম, অত্যাচারী ও পাশবিক বাহিনীতে পরিণত করেছিলেন।”

পুলিশি নির্যাতনের নানা দিক তুলে ধরে ড. আসিফ নজরুল বলেন, সরকারি দলের আদেশ ও ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য অনেকেই অত্যাচার চালান। তিনি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের উদাহরণ দেন। এছাড়া ফরেনসিক সুবিধার অভাবকেও অত্যাচারের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে জানান, পুলিশের হাতে নাগরিকদের নির্যাতন বন্ধ করতে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করা হয়েছে। ১২ ঘণ্টার মধ্যে আটক ব্যক্তির স্বজনদের জানাতে হবে, গুম সংক্রান্ত আইনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানানো বাধ্যতামূলক।

ড. আসিফ নজরুল পুলিশের সংস্কার কমিশন ও একটি নিবেদিত তদন্ত দল গঠনের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “ক্ষমতা থাকলেই কেউ মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করবে, তা ঠিক নয়। সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও জরুরি।”

গোলটেবিলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার সংস্কার নিশ্চিত না হলে চলমান সংস্কার উদ্যোগ অর্জিত হবে না।” তিনি উল্লেখ করেন, প্রশাসনে দলীয় প্রভাব এখনও অব্যাহত আছে এবং নিযুক্তি, পদোন্নতি, গ্রেফতার–জামিন-বাণিজ্য প্রভৃতি প্রভাবিত হচ্ছে।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, পুলিশে নতুন পোশাক অন্তর্ভুক্ত করা হলেও বাসস্থান ও কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ উন্নয়নের প্রতি বেশি নজর দেওয়া জরুরি। তিনি মিরপুরের একটি পুলিশ ব্যারাক উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, যেখানে ২০০ কর্মীর জন্য একটি বাথরুম এবং ২০ জন একই ঘরে ঘুমান।

তিনি মন্তব্য করেন, রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াও মানসিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন অপরিহার্য। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময়ে পুলিশ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগকে উপভোগ করেছে।

গোলটেবিলের আয়োজন যৌথভাবে করেছে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অব.) ও কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত