পে-স্কেল: মূল বেতন ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব, কোন গ্রেডে কত?

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন–ভাতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা জাতীয় বেতন কমিশনের সভাপতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের পে প্রপোজাল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেশে ৭ম জাতীয় পে–স্কেল কার্যকর হয় ২০০৯ সালের ১ জুলাই থেকে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ৮ম জাতীয় পে–স্কেল চালু হয়, যেখানে মূল বেতনে প্রায় ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। তিনি উল্লেখ করেন, অতীতে প্রায় প্রতি পাঁচ বছর পরপর নতুন পে–স্কেল ঘোষণা করা হলেও, ২০১৫ সালের পর থেকে গত ১০ বছরে কোনো নতুন পে–স্কেল দেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, এই সময়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালের পর যদি ২০২০ এবং ২০২৫ সালে দুটি নতুন পে–স্কেল বাস্তবায়ন করা হতো, তাহলে বেতন প্রায় ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তো।

বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি জানান, ২০২০ সালে ১ম গ্রেডের বেতন দাঁড়াত ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এবং ২০তম গ্রেডের বেতন ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। আর ২০২৫ সালে সেই বেতন আরও বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ৩ লাখ ১২ হাজার টাকা ও ৩৩ হাজার টাকাতে পৌঁছাত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মনে করেন, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নতুন পে–স্কেল না দেওয়ায় জীবনযাত্রার মানে চাপ পড়েছে এবং ন্যায্য পারিশ্রমিকের দাবি এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সার্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় ৯ম জাতীয় পে-স্কেলে মূল বেতন ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন কাঠামোয় প্রতিটি গ্রেডে নিম্নরূপ পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়—

১ম গ্রেডে ৮ম জাতীয় বেতনস্কেল অনুযায়ী মূল বেতন ছিল ৭৮,০০০ টাকা (নির্ধারিত), যা প্রস্তাবিত ৯ম জাতীয় বেতনস্কেলে হবে ৯৪,৪০০ টাকা;

২য় গ্রেডে মূল বেতন ছিল ৬৬,০০০–৭৬,৪৯০, নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী হবে ৮০,০০০–৯২,৫৩৭ টাকা;

৩য় গ্রেডে ছিল ৫৬,০০০–৭৪,৪০০, প্রস্তাবিত হয়েছে ৬৭,৭৬০–৮৯,০২৪ টাকা;

৪র্থ গ্রেডে ছিল ৫০,০০০–৭১,২০০, নতুন প্রস্তাব ৬০,৬০০–৮৬,১৫২ টাকা;

৫ম গ্রেডে মূল বেতন ৪৩,০০০–৬৯,৮৫০, প্রস্তাবিত ৫২,০৩০–৮৪,৫৫০ টাকা;

৬ষ্ঠ গ্রেডে ৩৫,৫০০–৬৭,০১০, প্রস্তাবিত ৪২,৯৫৫–৮১,০৮৩ টাকা;

৭ম গ্রেডে ২৯,০০০–৬৩,৪১০, নতুন প্রস্তাবে ৩৫,০৯০–৭৬,৭২৭ টাকা;

৮ম গ্রেডে ২৩,০০০–৫৫,৪৭০, প্রস্তাবিত ২৭,৮৩০–৬৭,১২১ টাকা;

৯ম গ্রেডে ২২,০০০–৫৩,০৬০, প্রস্তাবিত ২৬,৬২০–৬৪,২০৩ টাকা;

১০ম গ্রেডে ১৬,০০০–৩৮,৬৪০, নতুন প্রস্তাব ১৯,৩৬০–৪৬,৭৫৪ টাকা;

১১তম গ্রেডে ১২,০০০–৩০,২৩০, প্রস্তাবিত ১৪,৫২০–৩৬,৫৮০ টাকা;

১২তম গ্রেডে ১১,০০০–২৬,৫৯০, নতুন প্রস্তাব ১৩,৩১০–৩২,১৭৪ টাকা;

১৩তম গ্রেডে ১১,০০০–২৬,৫৯০, প্রস্তাবিত ১৩,৩১০–৩২,১৭৪ টাকা;

১৪তম গ্রেডে ১০,২০০–২৪,৬৮০, নতুন প্রস্তাব ১২,৩৪২–২৯,৮৬৬ টাকা;

১৫তম গ্রেডে ৯,৮০০–২৩,৪৯০, প্রস্তাবিত ১১,৮৫৮–২৮,৪২২ টাকা;

১৬তম গ্রেডে ৯,৩০০–২২,৪৯০, নতুন প্রস্তাব ১১,৩৩৩–২৭,২১৩ টাকা;

১৭তম গ্রেডে ৯,০০০–২১,৮০০, প্রস্তাবিত ১০,৮৯০–২৬,৩৭৮ টাকা;

১৮তম গ্রেডে ৮,০০০–২০,০১০, নতুন প্রস্তাব ৯,৬৮০–২৪,২১২ টাকা;

১৯তম গ্রেডে ৮,০০০–১৬,৮৫০, প্রস্তাবিত ৯,৬৮০–২০,৩৪৮ টাকা;

২০তম গ্রেডে ৮,২৫০–২০,০১০, প্রস্তাবিত ৯,৯৮৩–২৪,২১২ টাকা;

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান ও দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয় করে বেতন কাঠামো পুনর্গঠন করা এখন সময়ের দাবি। এই প্রস্তাবটি জাতীয় বেতন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। কমিশন এটি পর্যালোচনা করার পর সরকারের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ পাঠানো হবে।