ঢাকা, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ মজুদ রয়েছে যে ১০টি দেশে

২০২৫ অক্টোবর ২২ ১৮:১৮:০৯

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ মজুদ রয়েছে যে ১০টি দেশে

ডুয়া নিউজ: বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে থাকায় বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এক নতুন প্রবণতায় এগোচ্ছে সোনা মজুত বৃদ্ধি। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত সোনার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার টনেরও বেশি, যা বিশ্বের উত্তোলিত মোট সোনার প্রায় ১৭ শতাংশ।

শুধু ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যেই তারা কিনেছে ৩,২০০ টন সোনা, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ইতিহাসে সর্বাধিক ক্রয়।

ডলারের ঝুঁকি এড়াতে সোনার আশ্রয়

বিশ্লেষকদের মতে, চীন, রাশিয়া, ভারত, তুরস্ক, পোল্যান্ড ও কাজাখস্তানের মতো দেশগুলো এখন তাদের ডলারনির্ভর রিজার্ভের ঝুঁকি কমাতে এবং ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তা জোরদার করতে সোনায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এর ফলে সোনার দামও ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল ও ট্রেডিং ইকোনমিকসের তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সোনার রিজার্ভের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশ ও তাদের মজুত কৌশল নিম্নরূপ—

১) যুক্তরাষ্ট্র – ৮,১৩৩ টন

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোনার ভান্ডারের মালিক যুক্তরাষ্ট্র। ফোর্ট নক্স, ডেনভার ও ওয়েস্ট পয়েন্টের গভীর সংরক্ষণাগারে রাখা এসব সোনা কঠোর নিরাপত্তার আওতায় রয়েছে। মজুতের বেশিরভাগই সোনার বার আকারে, যা প্রয়োজনে কংগ্রেস অনুমোদিত সোনার কয়েন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

২) জার্মানি – ৩,৩৫০ টন

জার্মানির অর্ধেক সোনা ফ্রাঙ্কফুর্টে, বাকিটা নিউইয়র্ক, লন্ডন ও প্যারিসে সংরক্ষিত। ২০১২ সালে স্বচ্ছতা নিয়ে সমালোচনার পর দেশটি ২০১৬ সালের মধ্যে ৫৮৩ টন সোনা দেশে ফিরিয়ে আনে। ট্রাম্প যুগে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে পুনরায় সোনা দেশে ফেরানোর উদ্যোগ জোরদার করা হয়।

৩) ইতালি – ২,৪৫২ টন

১৮৯৩ সাল থেকে সোনা জমা শুরু করে ইতালি। বর্তমানে এর বড় অংশ যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে সংরক্ষিত।

৪) ফ্রান্স – ২,৪৩৭ টন

ফ্রান্স তার সম্পূর্ণ সোনা দেশের ভেতরে সংরক্ষণ করে। রাজধানীর ভূগর্ভে অবস্থিত বিশেষ ভল্ট ‘লা সুতেরেন’, যা মাটির প্রায় ২৭ মিটার নিচে অবস্থিত, সেখানেই রাখা হয় এই বিশাল ভান্ডার।

৫) রাশিয়া – ২,৩৩০ টন

রাশিয়া তার সব সোনা দেশেই সংরক্ষণ করে—মূলত মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় ২০২২ সালে তারা রুবলের মান সোনার সঙ্গে যুক্ত করে দেয়।

৬) চীন – ২,২৯৯ টন

২০০০ সালের পর থেকেই চীন ধারাবাহিকভাবে সোনার রিজার্ভ বাড়াচ্ছে। ২০২৪ সালে দেশটি ৪৪ মেট্রিক টন সোনা ক্রয় করেছে এবং প্রায় প্রতি মাসেই নতুন করে সোনা কিনছে, ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাতে।

৭) সুইজারল্যান্ড – ১,০৪০ টন

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের ৭০ শতাংশ সোনা দেশে, ২০ শতাংশ ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে এবং ১০ শতাংশ ব্যাংক অব কানাডায় সংরক্ষিত। দেশের ভেতরে সোনা মজুত রাখার বিষয়ে সেখানে গণভোটও অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

৮) ভারত – ৮৮০ টন

ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোনা কেনায় বেশ সক্রিয়। ২০২৩ সালে ১৬ টন ও ২০২৪ সালে আরও ৭২ মেট্রিক টন সোনা কেনা হয়। ১৯৯১ সালের পর প্রথমবার, ২০২৪ সালের জুনে যুক্তরাজ্য থেকে ১০০ টন সোনা দেশে ফিরিয়ে আনে ভারত।

৯) জাপান – ৮৪৬ টন

ব্যাংক অব জাপানের সোনা মজুতের তথ্য খুব একটা প্রকাশ্যে আসে না। তবে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পুরোনো মজুত রাখার পর দেশটি ৮০.৭৬ টন নতুন সোনা ক্রয় করেছে।

১০) তুরস্ক – ৬৩৫ টন

২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে তুরস্কের সোনার রিজার্ভ ১১ টন বৃদ্ধি পায়। ২০০০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশটির গড় সোনা মজুত ছিল ২৭১.৬১ টন, যা এখন প্রায় তিনগুণ বেড়ে ৬৩৫ টনে পৌঁছেছে।

সোনার দিকে নতুন বৈশ্বিক ঝোঁক

অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও ডলারের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ায় এখন দেশগুলো একটি তৃতীয় পক্ষমুক্ত, নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনাকে বেছে নিচ্ছে। এই মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনই আজকের সোনার বাজারের সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত