ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২
আই লাভ মুহাম্মদ এই বাক্যই কি অপরাধ? ভারতে বাড়ছে দমননীতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের কানপুরে ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’ লেখা একটি আলোকসজ্জিত সাইনবোর্ডকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ধর্মীয় উত্তেজনা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ৪ সেপ্টেম্বর, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কানপুরের সাঈদ নগরের মুসলিম বাসিন্দারা ওই সাইনবোর্ডটি টাঙান। এটি ছিল ঈদে মিলাদুন্নবীর সাজসজ্জার অংশ। তবে ঐতিহাসিকভাবে এ এলাকায় এমন সাইনবোর্ড টাঙানোর ঘটনা আগে ঘটেনি।
সাইনবোর্ডটি আলোকিত হওয়ার পর কিছু হিন্দু ব্যক্তি আপত্তি জানান এবং পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে রাতেই প্রশাসন সেটি সরিয়ে দেয়। এরপর স্থানীয় নয়জন মুসলিম পুরুষ এবং আরও ১৫ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা করা হয়, যদিও এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
স্থানীয় হিন্দু সংগঠন ‘শ্রী রামনবমী সমিতি’র সঙ্গে যুক্ত মোহিত বাজপায়ী বলেন, নবীজির (সা.) প্রতি ভালোবাসায় আপত্তি নেই, কিন্তু সাইনবোর্ডটি এমন এক স্থানে রাখা হয়েছিল, যা সাধারণত হিন্দুদের রাম নবমীর জন্য ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে মুসলিম বাসিন্দারা জানান, সেটি ছিল উন্মুক্ত একটি স্থান, যেখানে প্রতিবছর মিলাদুন্নবী উদ্যাপন করা হয় এবং এবারের আয়োজনের জন্য প্রশাসনের অনুমতিও নেওয়া হয়েছিল।
ঘটনার জেরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে কানপুর থেকে প্রায় ২৭০ কিলোমিটার দূরের শহর বেরেলিতে। এখানকার প্রভাবশালী মুসলিম নেতা ও ইত্তেহাদ-ই-মিল্লাত কাউন্সিলের (আইএমসি) প্রধান মাওলানা তৌকির রেজা খান কানপুর ও বেরেলির ঘটনায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রতিবাদে ২৬ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভের ডাক দেন। তবে স্থানীয় প্রশাসন সমাবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
আইএমসি এক বিবৃতিতে সমর্থকদের বিক্ষোভ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানালেও, কিছু সময় পর তা ‘ভুয়া বিবৃতি’ বলে দাবি করে খানের সমর্থকেরা নিজেদের মধ্যে বার্তা চালাচালি শুরু করেন। পরদিন জুমার নামাজের পর হাজার হাজার মুসলিম বেরেলির একটি বিখ্যাত মাজারের আশপাশে জড়ো হয়ে ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’ লেখা পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং কানপুরের পুলিশের ভূমিকার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
প্রশাসনের দাবি, এই বিক্ষোভ ছিল অনুমতি ছাড়াই সংঘটিত এবং এতে পুলিশের ওপর পাথর নিক্ষেপ ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেয় এবং মাওলানা তৌকির রেজা খানসহ বহু মুসলিমকে গ্রেফতার করে। শহরে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গ্রেফতার হওয়ার আগে ভিডিও বার্তায় তৌকির রেজা খান বলেন, এটি ধর্মীয় মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমনের চেষ্টা এবং এ ধরনের দমননীতি ভালো ফল বয়ে আনবে না। পরদিন, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বেরেলির ঘটনার নিন্দা জানান এবং এটিকে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করার পরিকল্পিত চক্রান্ত বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “কখনো কখনো মানুষ তাদের বাজে অভ্যাস ত্যাগ করতে পারে না... একজন মাওলানা ভুলে গেছেন কে ক্ষমতায় আছে।”
এই বক্তব্যের পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক চাপ আরও বাড়ে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এ ধরনের পদক্ষেপকে ‘বুলডোজার জাস্টিস’ বলে নিষিদ্ধ করলেও বাস্তবে তা থামেনি।
সরকার দাবি করেছে, বেরেলিতে ধ্বংস করা ভবনগুলো অবৈধভাবে নির্মিত ছিল। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভাষ্য, এসব উচ্ছেদ হয় আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই এবং তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে। এতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পরিবার ও সমাজের ওপর মারাত্মক অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব পড়ছে।
লেখক ও সমাজকর্মী সুমাইয়া রানা, যিনি উর্দু কবি মুনাওয়ার রানার কন্যা, বলেন, “বিজেপি সরকার মুসলিমদের ভয় দেখাতে চায় যাতে তারা ধর্মীয় বা মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে মুখ না খোলে।” তিনি লক্ষ্ণৌতে ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা.)’ লেখা পোস্টার হাতে নিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেন, যেখানে উপস্থিত এক ডজনেরও বেশি মানুষকে অল্প সময়ের জন্য আটক করে পুলিশ।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটস (এপিসিআর) জানায়, দেশজুড়ে এ পর্যন্ত এ ধরনের স্লোগান সংক্রান্ত ঘটনায় অন্তত ২২টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং আড়াই হাজারের বেশি মুসলিমের নাম এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কেবল বেরেলি থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ৮৯ জনকে।
এপিসিআরের সাধারণ সম্পাদক নাদিম খান বলেন, “নবীজিকে (সা.) ভালোবাসার প্রকাশকে এখন অপরাধ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে কোনো বিচারপ্রক্রিয়া ছাড়াই মামলা ও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ও অধিকার চর্চার ওপর সরাসরি আঘাত।”
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- ঘোষণা দিয়েও শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দেয়নি ১৭ কোম্পানি
- ৪০ বছরের ইতিহাসে ডিভিডেন্ডে নজির ভাঙল এপেক্স ট্যানারি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণায় রেকর্ড ভাঙ্গল লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স!
- খেলোয়াড়দের নিয়ন্ত্রণে শেয়ারবাজার, অসহায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা
- শেয়ারবাজারে হাহাকার, ৮ দিনে ৪২ হাজার কোটি টাকা গায়েব!
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে মুন্নু এগ্রো
- বস্ত্র খাতের ৮ কোম্পানিতে বেড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ
- পতন তান্ডবে শেয়ারবাজারে ছোটদের কফিনেও বড় পেরেক!
- লাফার্জ হোলসিমের উচ্চ মুনাফার 'অ্যাগ্রিগেটস' ব্যবসা
- মার্জিন ঋণ নিয়ে গুজব, বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান বিএসইসির
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে স্কয়ার টেক্সটাইল
- শেয়ারবাজারে সচেতনতা বাড়াতে এবার যুক্ত হচ্ছে মাঠ প্রশাসন
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ১৭ কোম্পানির ডিভিডেন্ড
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে বিএসআরএম লিমিটেড
- মার্জিন ঋণ আতঙ্কে হঠাৎ ধস নামলো শেয়ারবাজারে!