ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২

বিশ্ব খাদ্য দিবসে বাস্তবতা: ১৯.২% মানুষ এখনও খাবারের নিশ্চয়তা থেকে বঞ্চিত

২০২৫ অক্টোবর ১৬ ১৪:০০:১৭

বিশ্ব খাদ্য দিবসে বাস্তবতা: ১৯.২% মানুষ এখনও খাবারের নিশ্চয়তা থেকে বঞ্চিত

নিজস্ব প্রতিবেদক :আজ ১৬ অক্টোবর, বিশ্ব খাদ্য দিবস। বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য—‘উন্নত খাদ্য এবং উন্নত ভবিষ্যতের জন্য হাতে হাত রেখে’। তবে এ দিনে উদ্ভূত একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, খাদ্য উৎপাদন ও মজুতের অগ্রগতি থাকা সত্ত্বেও দেশের বড় অংশের মানুষ এখনও প্রতিদিনের খাবারের নিশ্চয়তা থেকে বঞ্চিত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ১৯.২ শতাংশ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছেন।

বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে খাদ্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। চাল, মাছ, মাংস এবং সবজি উৎপাদনে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। এমনকি কিছু খাদ্যপণ্যে রফতনির প্রস্তুতিও চলছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-র তথ্যমতে, স্বাধীনতার পর থেকে প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদনে তিন থেকে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি ঘটেছে। সরকার বলছে, কৃষিতে বিনিয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তি ও নীতিগত সহায়তা এই অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছে।

তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। একদিকে সরকার বলছে খাদ্য মজুত ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে, অন্যদিকে এখনও শহর ও গ্রামের অসংখ্য পরিবার প্রতিদিনের খাবারের নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। প্রান্তিক, দরিদ্র, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত এবং শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর জন্য খাবার একটি দৈনন্দিন সংগ্রাম। অনেক শিশু না খেয়ে স্কুলে যায়, অনেক গর্ভবতী মা প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্টে দেশের খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অক্টোবরের শুরুর দিকে তা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টনে। যদিও মজুতের পরিমাণ যথেষ্ট মনে হচ্ছে, তবে বিতরণ ব্যবস্থা এবং খাদ্য সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে কি না, সেটি বড় প্রশ্ন। বাজারে খাদ্য নষ্ট হচ্ছে বা অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে, অন্যদিকে দরিদ্র পরিবারগুলো পুষ্টিকর খাবার কিনতে পারছে না।

সরকারি উদ্যোগে তালিকাভুক্ত জেলেদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে সহায়তার বাইরে থাকা বিপুল সংখ্যক দরিদ্র মানুষ এখনও খাবারের জন্য সংগ্রাম করছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা নির্মূলের প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও, দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি দেখাচ্ছে যে লক্ষ্য অর্জন এখনো চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS)-র তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৯.২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছেন, যা আগের বছরের তুলনায় বাড়ছে।

গ্রামীণ অঞ্চলে দারিদ্র্য কিছুটা কমেছে। ২০২২ সালে গ্রামে দারিদ্র্য হার ছিল ২০.৫ শতাংশ, যা বর্তমানে ২০.৩ শতাংশে নেমেছে। শহরাঞ্চলে চিত্র ভিন্ন; শহরে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়ে ১৬.৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যেখানে আগে তা ছিল ১৪.৭ শতাংশ। বিভাগীয় পর্যায়ে বরিশাল বিভাগের দারিদ্র্য হার সবচেয়ে বেশি, ২৬.৬ শতাংশ, আর চট্টগ্রামে সবচেয়ে কম, ১৫.২ শতাংশ। জেলা পর্যায়ে মাদারীপুর সবচেয়ে দরিদ্র, ৫৪.৪ শতাংশ, এবং নোয়াখালী সবচেয়ে কম, মাত্র ৬.১ শতাংশ।

উপজেলা স্তরে মাদারীপুরের ডাসার সবচেয়ে দরিদ্র, ৬৩.২ শতাংশ দারিদ্র্য। ঢাকার পল্টন এলাকায় দারিদ্র্য মাত্র ১ শতাংশ। রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে—কামরাঙ্গীরচর ১৯.১ শতাংশ, ভাষানটেক ১৬.২ শতাংশ, মিরপুর ১২.২ শতাংশ এবং বনানী ১১.৩ শতাংশ। কিছু মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত এলাকায় দারিদ্র্য খুবই কম—নিউমার্কেট ১.৭ শতাংশ, ধানমন্ডি ১.৫ শতাংশ, মতিঝিল ৩.৬ শতাংশ এবং গুলশান ৩.২ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, খাদ্য উৎপাদনে অর্জিত অগ্রগতি সত্ত্বেও বাস্তব খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর বিতরণ ব্যবস্থা, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা এবং নীতিগত সমন্বয় অপরিহার্য। বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘উন্নত খাদ্য ও উন্নত ভবিষ্যতের জন্য হাতে হাত রেখে’ বাস্তবায়ন করতে হলে সবার জন্য পুষ্টিকর খাবারের নিশ্চয়তা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

ডুয়া/নয়ন

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত