ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২

পাকিস্তানের মৃত্যু হয়েছে: ইকবাল হাসান 

২০২৫ অক্টোবর ০২ ১৬:২০:৪৮

পাকিস্তানের মৃত্যু হয়েছে: ইকবাল হাসান 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, আজকে বাংলাদেশ এমন এক অপশক্তির মুখোমুখি, যারা প্রকাশ্যে নয়, আড়ালে থেকে দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা করে চলেছে। তিনি এদের ‘অদৃশ্য ফ্যাসিবাদ’ বলেও অভিহিত করেন। যারা এক সময় পাকিস্তানের পক্ষে ছিল, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে এবং আলবদর-আল শামসের মাধ্যমে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে — আজ তারাই ইতিহাস বিকৃত করে বিভ্রান্তি ছড়াতে চায়।

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুরে সিরাজগঞ্জ শহরের রেলগেট এলাকায় বিএনপির ১, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

টুকু বলেন, “আজকে একটি দল দাবি করছে ভারত বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। এটা স্রেফ ইতিহাস বিকৃতি। পাকিস্তান একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, আর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে জনগণের চেতনা ও অধিকার আদায়ের মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে ‘ইসলামিক রিপাবলিক’ ঘোষণার পর থেকেই তারা ধর্মকে ব্যবহার করে বাঙালিদের শোষণ করেছে। পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অর্থ ব্যবহৃত হয়েছে। তখনই বাঙালিরা বুঝে গিয়েছিল, তেল আর জলে এক হবে না।”

তিনি বলেন, “১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনগণ শেখ মুজিবুর রহমানকে বিজয়ী করেছিল। এরপরও ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় জনগণ সংগ্রামে নেমেছিল, শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। সুতরাং আজ যারা বলে ভারত আমাদের ভুল বুঝিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করিয়েছে, তারা মূলত সেই শক্তির উত্তরসূরি যারা একাত্তরে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল।”

তিনি আরও বলেন, “ভোট দিলে পাল্লায় ভোট পাবে আল্লায়—এ ধরনের স্লোগান বিভ্রান্তিকর। এসব দিয়ে গ্রামের মায়েদের বিভ্রান্ত করা যায় না। ইসলামে মিডিয়ার মাধ্যমে কেউ আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে পারে না। নামাজ, রোজা যার যার নিজেরই পালন করতে হয়।”

টুকু অভিযোগ করে বলেন, “এ দলের নেতারা এক সময় রাজপথে ছিল না, আন্দোলনের সময়ও দেখা যায়নি। ৫ আগস্টের ঘটনার পর হঠাৎ করে বিভিন্ন জায়গায় তাদের সক্রিয় হতে দেখা গেছে। তারা ছাত্রলীগে, আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনে ঢুকে পড়েছিল। এখন তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়, প্রতিষ্ঠান দখলের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজসবখানে তারা নিজেদের লোক বসিয়েছে।”

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, আজ তারাই বধ্যভূমিতে গিয়ে রবীন্দ্রসংগীত গায়। এটা নিছক ভণ্ডামি। ইতিহাসকে সম্মান না করে এভাবে নাটক করে তারা জনগণের সহানুভূতি পেতে চায়।”

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সিরাজগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীরা কখনোই রাজপথ ছেড়ে যায়নি। জেলা বিএনপির সভাপতি একজন নারী তাকে নানা নির্যাতনের মধ্যেও দমন করা যায়নি। রাজপথে তাকে বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়েছে, গুলি চালানো হয়েছে, তবু তিনি পিছু হটেননি। আমি যখন দেশের বাইরে ছিলাম, তখন সাইদুর রহমান বাচ্চু প্রতিটি আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করে রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন।”

সভায় সভাপতিত্ব করেন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া এবং সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুন্সী জাহেদ আলম।বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু।এছাড়াও বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদুজ্জামান মুরাদ এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়েস।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত