ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকবাজারে বাংলাদেশের নতুন সমীকরণ

হাসান মাহমুদ ফারাবী
হাসান মাহমুদ ফারাবী

রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ০২ ০৯:৫৯:৫৮

যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকবাজারে বাংলাদেশের নতুন সমীকরণ

হাসান মাহমুদ ফারাবী: যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকবাজারে চীনের দীর্ঘদিনের প্রভাব ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। সেই শূন্যস্থান পূরণ করছে বাংলাদেশ। রপ্তানির আয়, পরিমাণ এবং গড় ইউনিট প্রাইস—সব সূচকেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও মোট অর্থমূল্যে চীনের রপ্তানি বাংলাদেশের দ্বিগুণেরও বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করবে।

মার্কিন শুল্ক কাঠামোর কারণে বাংলাদেশ বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। চীনা তৈরি পোশাকে যেখানে পাল্টা শুল্ক প্রায় ১৪৫ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি মাত্র ২০ শতাংশ। আবার মার্কিন কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধাও পাচ্ছে বাংলাদেশ।

রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা আশা করছেন, আগামী বছরগুলোতে এই সুবিধার জেরে চীনের হারানো বাজারের বড় অংশ বাংলাদেশ দখল করবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা দেশ, এখান থেকেই মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ আসে।

অটেক্সার (যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল) তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পোশাক রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ৪৬ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।

অটেক্সা বলছে, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি ছিল ৩ হাজার ৫৪ কোটি ডলার, যা গত বছর নেমে আসে এক হাজার ৬৫১ কোটি ডলারে। অন্যদিকে বাংলাদেশের রপ্তানি ওই সময়ের ৫৪০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩৪ কোটি ডলারে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে শুরু হওয়া শুল্কযুদ্ধের কারণে চীনের রপ্তানি ক্রমেই কমছে। আগামী দিনগুলোতে এটি আরও কমবে। তবে তিনি সতর্ক করেন, বাংলাদেশকে এখন ভলিউমের চেয়ে মূল্য সংযোজিত পণ্য বাড়াতে হবে। কারণ একই পরিমাণ রপ্তানিতে ভিয়েতনামের মতো দেশ বেশি মূল্য পাচ্ছে, অথচ বাংলাদেশ তুলনামূলক কম আয় করছে।

রপ্তানির পরিমাণগত দিকেও বাংলাদেশের উন্নতি স্পষ্ট। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পোশাকের ভলিউম কমেছে ১৮ শতাংশের বেশি। ২০১৫ সালে চীনের রপ্তানি ছিল এক হাজার ১৩৮ মিটার, যা ২০২৪ সালে নেমে আসে ৯২৯ মিটারে। একই সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি ১৮৭ মিটার থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৭ মিটারে—বৃদ্ধি প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ।

২০১৫ সালে চীনা পোশাকের ইউনিটপ্রতি গড় মূল্য ছিল ২ ডলার ৬৮ সেন্ট। এক দশক পর তা নেমে এসেছে ১ ডলার ৭৮ সেন্টে, অর্থাৎ প্রায় ৩৪ শতাংশ কমে গেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের দরে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির গড় ইউনিট মূল্য একই সময়ে ২ ডলার ৮৯ সেন্ট থেকে বেড়ে ৩ ডলার ১০ সেন্টে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ এখন শুধু রপ্তানির পরিমাণে নয়, বরং দরে–দামেও ইতিবাচক অগ্রগতি দেখাচ্ছে, যা বাজারে শক্ত অবস্থান গড়ার ক্ষেত্রে বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এসএখান/

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এমিরেটস এয়ারলাইন্সের... বিস্তারিত