ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ আশ্বিন ১৪৩২

খাদের কিনারা থেকে জেগে উঠছে সেই পাঁচ ইসলামী ব্যাংক

আবু তাহের নয়ন
আবু তাহের নয়ন

সিনিয়র রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ০২ ০৯:৩৯:০৫

খাদের কিনারা থেকে জেগে উঠছে সেই পাঁচ ইসলামী ব্যাংক

আবু তাহের নয়ন: খাদের কিনারে নেমে আসা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারে নতুন করে জোয়ার এসেছে। একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার গত চার কার্যদিবসে ৩৬ থেকে ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি ‘ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫’ জারি করে বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম এবং নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণ থেকে ব্যাংকগুলোকে মুক্ত করতে উদ্যোগ নেয়। এই আইনের অধীনে একীভূত হওয়ার পর ব্যাংকগুলোর মালিকানা সরকারের হাতে যাবে। এ জন্য সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

অধ্যাদেশে স্পষ্ট করা হয়েছে, আমানতকারীদের স্বার্থ সর্বাগ্রে দেখা হবে। কিন্তু শেয়ারহোল্ডাররা কোনো অর্থ ফেরত পাবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বিপুল ঋণ জালিয়াতি এবং নামে-বেনামে অর্থ লুটের দায় শেয়ারহোল্ডারদের। তাছাড়া দায় মেটানোর মতো সম্পদও ব্যাংকগুলোর হাতে নেই। এ কারণেই একপর্যায়ে তালিকাভুক্ত এই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারদর শূন্যে নামানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ফলে শেয়ারগুলো দীর্ঘ সময় ধরে ক্রমাগত দর পতনের শিকার হয়।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছে শেয়ারহোল্ডারদের কিছু ক্ষতিপূরণ বা নবগঠিত ব্যাংকের শেয়ার দেওয়ার প্রস্তাব। বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। এই সম্ভাবনার খবরে হঠাৎ করেই বাজারে অতল গহ্বরে আসা শেয়ারগুলোর চাহিদা তৈরি হয়েছে এবং দরও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

উদাহরণ হিসেবে দেখা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর এসআইবিএল-এর শেয়ার ১৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ধসে ৩ টাকায় নেমেছিল। কিন্তু সম্প্রতি শেয়ারটি ৪৭ শতাংশ বেড়ে ৪ টাকা ৪০ পয়সায় উঠেছে। একদিনেই ডিএসইতে এ ব্যাংকের ১২ লাখ ৩৫ হাজার শেয়ার কেনাবেচা হয়, যার বাজারমূল্য দাঁড়ায় ৫৪ লাখ টাকা।

একইভাবে, এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার গত বছর ১১ টাকা থেকে নেমে মাত্র ২ টাকা ৮০ পয়সায় ঠেকে। তবে ক্ষতিপূরণের গুঞ্জনে তা আবার ৪৩ শতাংশ বেড়ে ৪ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার গত বছর ৮ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছিল। সর্বশেষ চার দিনে এর দর ফের ৪৪ শতাংশ বেড়ে ২ টাকা ৬০ পয়সায় উঠেছে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার এক বছরে ৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে নেমে ১ টাকা ৩০ পয়সায় ঠেকেছিল। তিন দিনেই শেয়ারটি ৩৮ শতাংশ বেড়ে ১ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ারও একসময় ৮ টাকা ২০ পয়সায় ছিল। তা কমে ১ টাকা ৪০ পয়সায় এলে সর্বশেষ তিন দিনে আবার ৩৬ শতাংশ বেড়ে ১ টাকা ৯০ পয়সায় পৌঁছেছে।

বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, এসব ব্যাংক থেকে বিগত সরকারের আমলে বিপুল অঙ্কের অর্থ লুট হয়েছে। তাদের খেলাপি ঋণের হার গড়ে ৭৮ শতাংশ, যা সর্বনিম্ন ৪৮ থেকে সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত। এত বড় আর্থিক ক্ষতির পরও শেয়ারদরের নতুন উত্থান বিনিয়োগকারীদের আশার আলো দেখাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, তাদের সমূহ ক্ষতির কথা বিবেচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত